The Lazy Vlogger 06

   

      আমার ইউটিউব ভ্লগ [My Youtube Vlog] : 06

Prabir Kumar Das | The Lazy Vlogger

|| Page 01 |Page 02 |Page 03 |Page 04 || Page 05 || Page 06 || Page 07 ||



কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০২৬ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 026]
১২ই ভাদ্র, ১৪৩০; (30th August, 2023), বুধবার।


সুপ্রভাত বন্ধুরা। কামদেবপুর গ্রামে সকলকে আরও একবার স্বাগত জানাচ্ছি আমি প্রবীর, দা লেজি ভ্লগার। আশা করি সকলেই খুব ভালো আছেন। চলুন শুরু করি আরও একটা নতুন ভ্লগ। এখন সকাল সাতটা। আর আমি এখন রয়েছি, বাঁশ বাগানে। যাবো সেই কলের ধারে। ... ... 

আমার সামনে রতন কাকা। মাথায় বেশ বড় বোঝা নিয়ে, রতন কাকাও মাঠে চলেছেন। বিশাল বড় মশারির জাল। প্রধানত ফসল ঝাড়ার সময় এই জালের দরকার পরে। অনেক গুলো ছোট ছোট জাল একসঙ্গে সেলাই করে এরকম বড় জাল তৈরি করে নেওয়া হয়। ... ... 

বৈদ্যনাথ কাকা। উনিও মাঠে চলেছেন। আসলে কয়েকদিনের বিরতির পর আস্তে আস্তে মাঠে আবার ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। এমনিতেই একটা ফসল ঘরে তোলার পর, সকলে কয়েকদিনের জন্য বিশ্রাম নেন। তার উপর এখানে বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সেকারণেই সকলে বেশ কয়েকদিনের জন্য ছুটির মেজাজে ছিলেন। আজ থেকে সকলে মিলে আবার নতুন করে চাষে নেমেছেন। জমি ভালো করে চাষ দিয়ে কেউ তিল বুনবেন, কেউ বা আবার পাট। ... ... 

বাঃ এক ঝাঁক সাদা বক। যখন একসঙ্গে অনেকগুলো পাখি উড়ে যায়, দেখতেও দারুন লাগে। জমিতে নতুন করে চাষ দেওয়া হয়েছে বলে, মাটির তলার পোকা গুলো বের হয়ে এসেছে। সেগুলো খেতেই এদের এখানে আগমন ঘটেছে। যাইহোক যেটা বলছিলাম, এই বিশাল বিশাল মশারির জালগুলো জমিতে পেতে তার উপরেই ফসল ঝাড়া হয়। না হলে মাঠে ফসল ছড়িয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এখানে সকলকেই দেখেছি, ফসল ঝাড়ার সময় এই জাল ব্যবহার করেন। আজ অথবা আগামী কাল হয়তো রতন কাকার জমিতে ফসল ঝাড়া হবে। সেকারণেই উনি জাল নিয়ে মাঠে এলেন। ... ... 

নিখিল দা, ট্র্যাক্টর ভর্তি করে গোবর সার নিয়ে মাঠে চলেছেন। জমিতে চাষ দেওয়ার আগে মাঠে ভালো করে ছড়িয়ে দেবেন। ওদিকে কিশোর ওর ট্র্যাক্টর নিয়ে এতক্ষণে মাঠে পৌঁছে গিয়েছে। আমিও তাই তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে হেঁটে এলাম। এখানে সময়মত পৌঁছাতে হবে। নাহলে হয়তো সব কাজ শেষ করে কিশোর ওর ট্র্যাক্টর নিয়ে বাড়ি চলে যাবে। আমার আর ভ্লগ করাই হবে না। ... ... 

এই দেখুন, এখানেও এক ঝাঁক সাদা বক। তবে এখানে সংখ্যায় অনেক বেশি ... ...

কিশোর মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ আগেই এখানে ট্র্যাক্টর নিয়ে চলে এসেছে। কারন, এই জমিটা তো দেখছি অলরেডি দুবার করে চাষ দেওয়া হয়ে গেছে। কেবল আলের ধার গুলো বাকি। সেখানে ভালো করে চষে দিয়েই ও অন্য কোনও জমিতে চলে যাবে। ... ... 

ঠিকই বলেছি। এখানে চাষ শেষ করে কিশোর ওর ট্র্যাক্টর নিয়ে অন্য কোথাও চলেছে। চলুন সেদিকেই যাওয়া যাক। ... ...  এই দেখুন, এই জমিতে সর্ষে গাছের গোঁড়া এখনো রয়ে গেছে। এখনো চাষ দেওয়া হয়নি। তবে কিশোর চলেছে অন্য মাঠে। ওটা ওম দের জমি। ওর দাদু হয়তো এতক্ষণে সেখানে পৌঁছে গেছেন। রফিক ভাইও আজ আসবে। তবে আজ ওম মাঠে আসবে না। ও স্কুলে যাবে। ... ... 

এই তো, ওম'এর দাদু চলে এসেছেন। রফিক ভাইও তো ওনার সঙ্গে ছিলেন। ও এই যে, রফিক ভাইও উপস্থিত। এতক্ষণ ওনারা কলের ধারে ছিলেন। সাব-মার্সিবেল পাম্পে পাইপ লাগিয়ে, সেই জলে অন্য একটা জমি ভিজিয়ে দিয়ে এলেন। জমিটা ভীষণ শুকনো হয়ে গিয়েছে। তাই চাষ দেওয়ার আগে ভিজিয়ে দিতে হল। তবে জমি জলে ভর্তি হতে বেশ সময় লাগবে। আসলে অনেকটা জমি। তাই মিনিমাম ঘণ্টা তিনেক তো লাগবেই, বেশিও লাগতে পারে। সেকারণে ভোর বেলা মাঠে এসে ওনারা পাম্প চালিয়ে দিয়ে জমি ভেজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। এখন হাতে কিছুটা সময় পেয়ে, এদিকের কাজ কতটা এগিয়েছে সেটা দেখে নিতে এসেছেন। ... ...

আজ পাখিদের খুব মজা। ওদের আজ অঘোষিত পিকনিক। জমিতে তো এক ঝাঁক সাদা বক দেখতেই পাচ্ছেন। সংখ্যায় ওরা বেশ বেশি। এদের সাহস একটু বেশি হয়। ট্র্যাক্টর এর ঠিক পিছন পিছন এরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। যান্ত্রিক এতো আওয়াজেও এদের কোনও ভয় নেই। ট্র্যাক্টরের ফলায় মাটি ভেঙ্গে পোকা বেড়িয়ে এলেই এরা ধরে নিচ্ছে। সেই তুলনায় শ্যামা, দোয়েল, ফিঙে বা শালিক পাখি একটু ভিতু। উপরের ইলেকট্রিক তারে দেখুন, এরা লাইন দিয়ে বসে রয়েছে। ট্র্যাক্টরের কাজ শেষ হয়ে চলে যাওয়ার পর মাঠ ফাঁকা হলে এরা নেমে আসে। ... ...

কিশোরের জ্যাঠার এই জমিতে মুসুরি লাগানো ছিল। সেই জন্য জমি বেশ পরিষ্কার। জমিতে সর্ষে লাগানো থাকলে ফসল কাটার পর জমিতে সর্ষের কাঠি ভর্তি থাকে। চাষ দেওয়ার পরও এই কাঠি ঠিক মতো পচতে চায় না। বেশ দেরি হয়। ফলে পরের চাষ করার সময় একটু অসুবিধাও হয়। যাই হোক, এখানে জমি চষা চলতে থাকুক। ওদিকে ওম দের দূরের মাঠে গম লাগানো আছে। চলুন গমের ফলন কতটা হল, দেখে আসি। ... ...

বাঃ!! গমের ফলন তো এবার বেশ ভালো দেখছি। গম এখনো পাকেনি। মাঠ একেবারে সবুজ হয়ে আছে। সকালের নরম রোদে এই সবুজ গম, দারুন দেখতে লাগছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই মন ভরে যায়। এই মাঠে তো দেখছি এখনো মুসুরিও রয়েছে। আমি আবার ভুল ও বলতে পারি, এগুলো ছোলাও হতে পারে। মনে হচ্ছে এখানে ফসল দেরি করে লাগানো হয়েছিল। এরকম দেরি করে ফসল লাগানো হলে তাকে স্থানীয় ভাষায় বলে "নামলা"। এই নামলা ফসলে ফলনের পরিমান একটু কম হয়। যাইহোক আবার গমের ক্ষেতে ফিরে আসি। গম এখনো পাকেনি। এখনো প্রায় দিন পনেরো লাগবে। গম পেকে গেলেও দারুন দেখতে লাগে। পাকা গমের রঙ সোনালী হলুদ। যদি কোনোদিন সুযোগ হয়, পাকা গমের খেত দেখতে কেমন, তা নিশ্চয়ই ছবি তুলে আপনাদের দেখানোর চেষ্টা করবো।.। ... ...

রোদের তেজ আস্তে আস্তে বাড়ছে এবার। চলুন আরও একবার রফিক ভাইদের কাছে যাওয়া যাক। গিয়ে দেখি, কিশোরের কাজ আর কতটা বাকী আছে ... ...

কিশোর এখনো একই জমিতে চাষ দিচ্ছে। আসলে বেশ বড় জমি। তাই চাষ দিতে একটু বেশি সময় লাগছে। তবে খেয়াল করে দেখেছি, প্রতিটা জমিতেই কিশোর দুবার করে চাষ দেয়। একবার আড়ে, আর একবার লম্বায়। মনে হয় সেটাই নিয়ম। একবার করে চাষ দিলে মাটি মনে হয় সম্পূর্ণ ভাঙে না। তাই দুবার করে চাষ দিতে হয়। এখানে আবার পাশের জমিতে এখনো ফসল লাগানো রয়েছে। মনে হয় মুসুরি লাগানো। সেইজন্য ওই আলে চাষ দেওয়ার সময় কিশোরকে একটু সাবধানে ট্র্যাক্টর চালাতে হচ্ছে। নাহলে ট্র্যাক্টরের চাকা বা ফলা জমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই একটু বেশি সময় লাগছে। ... ...

আগের জমিতে চাষ দেওয়া শেষ করে কিশোর ওর ট্র্যাক্টর নিয়ে এখানে চলে এসেছে। মনে হয় ওর জ্যাঠামশাইয়ের এটাই শেষ জমি যা চাষ দিতে বাকি ছিল। এটা চষে দিয়েই কিশোর মনে হয় অন্য মাঠে চলে যাবে। আজকের মতো ওর এখানকার কাজ শেষ। আমরাও এবার বাড়ি ফিরবো। এখনো সকালের জলখাবার খাওয়া হয় নি। খাবার খেয়ে আবার মাঠে আসতে হবে। কল চালিয়ে পাইপ দিয়ে জমিতে জল দেওয়া হচ্ছে। ঘন্টা দুয়েক পরে কল বন্ধ করতে আসতে হবে। এখানে কিশোরের কাজ চলতে থাকুক। আমরা বরং চলুন দুপুরের রান্নার জন্য মাঠ থেকে কিছু শাকসবজি তুলে নিয়ে যাই। ... ...

ডান দিকের জমিতে পেঁয়াজ লাগানো আছে। বাম দিকে মাচা করে পটল লাগানো ছিল। ফলন শেষে সব গাছ মরে গেছে। এদিকের পেঁয়াজ গাছও বেশ বড় হয়ে গেছে। তবুও সেখান থেকে কয়েকটা কচি পেঁয়াজের কলি তুলে নিয়ে গিয়ে আলু দিয়ে ভাজা করলে, ভালোই রাতে রুটি খাওয়া হয়ে যাবে। ... ... 

মাঠ থেকে টাটকা পেঁয়াজের কলি আর বেশ বড়সড় এক আঁটি পালং শাক নিয়ে ওম'এর দাদু বাড়ির পথে হাঁটা দিলেন। আমিও ওনার সাথে বাড়ির পথ ধরলাম। এখন অবশ্য পালং শাকের শিষ হয়ে গিয়েছে। তবে এই শিষ পালং, আলু বেগুন শিম দিয়ে একটু ঝাল ঝাল চচ্চড়ি খেতে দারুন লাগে। কোনও মশলার দরকার পরে না, কেবল একটু সর্ষে বাটা আর নুন হলুদ, ব্যাস। যাইহোক লঙ্কা চাষের আলোচনা করতে করতে অবশেষে কল ঘরের কাছে পৌঁছে গেছি। এই দেখুন, নতুন করে চাষ শুরু করবেন বলে সাব-মার্সিবেল পাম্পে পাইপ লাগিয়ে জমি ভেজানোর কাজ চলছে। ... ...

অনেক বাজার হয়ে গেছে, পেঁয়াজ কলি, শিষ পালং, সজনে ফুল, বেগুন, উচ্ছে, কাঁচা লঙ্কা ... দুই হাত ভর্তি বাজার নিয়ে, চলুন আবারও আল পথে হাঁটা যাক। ... ...

এই দেখুন, এই জমিটা ভেজানো হচ্ছে। বেশ বড় জমি। ভালোই সময় লাগবে। তবে দিন দুয়েক আগে বৃষ্টি হয়েছিল। তাই মাটিতে কিছুটা রস রয়েছে। ... ...

আল পথে হাঁটতে হাঁটতে এরমধ্যেই আমি হাঁপিয়ে গেছি। বেশ জোরে জোরে শ্বাস পরছে। তবে আমার সামনের এই সত্তর ঊর্ধ্ব মানুষটির চেহারায় আমি তেমন কোনও লক্ষণ দেখছি না। মাঝে মাঝে এই মানুষটিকে দেখলে আমার বেশ অবাক লাগে। ওনার বাড়ি থেকে মাঠের এই কলঘর বা জমি গুলোর দূরত্ব এক কিলোমিটারের একটু বেশি হবে। যেদিন মাঠে কাজের চাপ বেশি থাকে, সেদিন তো আমি দেখেছি উনি দিনে প্রায় পাঁচবার মাঠ-বাড়ি যাতায়াত করেন। তার মানে দিনে প্রায় দশএগারো কিলোমিটার হাঁটা। সত্তর বছর বয়সে পৌঁছে আমাদের মতো শহুরে লোকেদের এসব কল্পনা করার ক্ষমতা হবে না, এতটা হাঁটা তো অনেক পরের কথা। ... ...

গল্প করতে করতে অনেকটাই পথ হেঁটে চলে এসেছি। পুরো রাস্তার অন্তত সত্তর ভাগ তো হবেই। সামনে আর একটা মাঠ। ওটা পার হলেই ছোট দাদুর কাঁঠালতলা। মাঝে বিভিন্ন কাজে বেশ কয়েকবার দাঁড়াতে হলেও, একটানা আলপথে হেঁটে এসে আমি বেশ হাঁপিয়ে গেছি। তাও এখন মাঠ প্রায় সম্পূর্ণ ফাঁকা। কোনও ফসল নেই। এছাড়া দিন দুই আগে বৃষ্টি হলেও এখন আল সম্পূর্ণ শুকনো, ঝরঝরে। তারপরও আমি এই পথে হেঁটে এসে হাঁপিয়ে গেছি। ... ... এদিকের জমিগুলো এখনো চাষ দেওয়া হয় নি। সর্ষের গোঁড়া এখনো লম্বা খোঁচা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই সর্ষের শুকনো গোঁড়ার ভিতর দিয়ে হাঁটতে গেলে খুব পা কেটে যায়। এই দেখুন বাম দিকের জমিতে চাষ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ডান দিকের জমিতে এখনো চাষ দেওয়া হয়নি। মনে হয় দূরের মাঠগুলোয় চাষ দেওয়া শেষ করে তারপর কিশোর কাছের মাঠে চাষের কাজে হাত দেবে। এদিকে হাঁটতে হাঁটতে শ্রীকান্তদের কলঘর পর্যন্ত চলে এসেছি। 

শ্রীকান্ত ওদের কলের ধারের জমিতে লঙ্কার বীজ চারিয়েছে। বীজ থেকে গাছ বের হলে, চারা অন্য জমিতে নিয়ে গিয়ে সার দিয়ে লাগাতে হবে। আর লঙ্কার পাশের জমিতে শ্রীকান্ত লাগিয়েছে গ্যামা, যা প্রধানত গরুর খাবার হিসাবেই ব্যবহার করা হয়। এইতো ছোট দাদুর কাঁঠাল তলার মাচালে পৌঁছে গেছি। ওখানে বুড়ো কাকাকে দেখতে পাচ্ছি। সঙ্গে মেজদাদুও রয়েছেন দেখছি। কেবল সামনের জমিটা পার হলেই আমবাগান, তারপর বাঁশ বাগান পেরলেই বাড়ি। বাড়ি পৌঁছে হাতমুখ ধুয়ে আগে জল খেতে হবে। তারপর অন্য কাজ। আজকের এই পর্ব আর খুব বেশি বড় করলাম না, এখানেই শেষ করলাম। পরের পর্বে আবার দেখা হবে। ততদিন সকলে ভালো থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আর যদি আজকের পর্ব আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে প্লীজ লাইক করবেন এবং আমার চ্যানেল টি  সাবস্ক্রাইব করবেন। বাই......

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০২৭ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 027]
২রা আশ্বিন, ১৪৩০; (20th September, 2023), বুধবার।


অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি, প্রায় মিনিট পনেরো আগে দেখেছিলাম, হারু কাকার সারের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যে কোনও মুহূর্তে চলে আসবে। আগে রূপকের টোটো তে চেপে বসি, তারপর সব বলছি। 

এই দেখুন, এখানে "নাড়া" পোড়ানোর কাজ চলছে। এতে যে এতো পরিবেশ দূষণ হয়, সেটা কেউ মানতেই চায় না। আমি খেয়াল করে দেখেছি, এভাবে যে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, সেটা এঁরা ভালোভাবেই জানেন, তবুও এক প্রকার বাধ্য হয়েই সকলে এই কাজটি করেন। আসলে একটা চাষ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, এই বিপুল পরিমান নাড়া নষ্ট করার আর কোনও পদ্ধতি এদের জানা নেই। তাই চারিদিক ছাই আর ধোঁয়ায় ভরে গেলেও মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। 

যাইহোক, উপায় যখন নেই, মন খারাপ করেও লাভ নেই। তার চেয়ে বরং আজকের ভ্লগে ফেরত আসি। good afternoon বন্ধুরা। সকলকে আরও একবার আমার ভ্লগে স্বাগত জানাচ্ছি। আমি প্রবীর, দা লেজি ভ্লগার। আশা করি সকলেই খুব ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। ... ... এই দেখুন কথা বলতে বলতে আমরা কাঁড়ালিয়া গ্রামে ঢুকে পরেছি। বাঁদিকে সেই সেগুনের জঙ্গল আর তারপরেই লিচু বাগান। রাতের অন্ধকারে এই জায়গাটা পার হতে বেশ গা ছমছম করে। ... ... এতক্ষণে সকলেই বুঝতে পেরেছেন, আমি এই মুহূর্তে কোনও গাড়িতে বসে আছি। হ্যাঁ ঠিকই, নতুন পাড়ার মুখে আমি রূপকের টোটোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আসলে গ্রামে রূপক'দের একটা ছোট্ট মুদিখানা দোকান রয়েছে। সেই দোকানের জন্যই কিছু মালামাল কিনতে রূপক টোটো নিয়ে বড় আটাগীয়া যাচ্ছে। শোনা মাত্রই এই সুযোগ আমি আর হাতছাড়া করতে রাজি হইনি। GoPro টি আমার সঙ্গেই ছিল। সেটি নিয়েই চেপে বসেছি রূপকের টোটোতে। ইচ্ছা আছে বিকেলের এই গোধূলি আলোয় আমাদের চলার পথের একটি ছোট্ট ভিডিও বানিয়ে আপনাদের দেখানোর। এছাড়া বড় আটাগীয়া তে একটি বেশ বড় শিব মন্দির আছে। যদি সুযোগ হয়, সেই মন্দিরেরও ছবি তোলার চেষ্টা করবো। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তবে একটাই অসুবিধা। আমার কাছে GoPro এর একটাই ব্যাটারি রয়েছে। বাকি ব্যাটারি গুলো বাড়িতে চার্জে বসানো আছে। তাই ক্যামেরার চার্জ কতক্ষণ থাকবে সেটা নিয়েই একটু ধন্দ আছে। যাইহোক, সামনেই কাঁড়ালিয়া মোড়। কামদেবপুর গ্রামে যাওয়ার এই রাস্তা সেখানেই ১৪ নম্বর রাজ্য-সড়কের সাথে মিশেছে। কাঁড়ালিয়া মোড় থেকেই আমরা রাজ্য-সড়ক ধরে পূর্ব দিকে, অর্থাৎ হিজুলী মোড়ের দিকে যাবো। 

এইতো এখন আমরা ১৪ নম্বর রাজ্য-সড়কে। দেখে অবশ্য আপনারা বুঝতে পারছেন, এই রাস্তাটা আগের তুলনায় একটু চওড়া, দুই লেনের রাস্তা। আর রাস্তার অবস্থাও খুব একটা খারাপ নয়, কিছু কিছু জায়গায় উপরের পিচের চাপটি চটে গেলেও মোটের উপর রাস্তা বেশ ভালো। এই দেখুন এটা দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ, সূর্য অস্ত যাচ্ছে। কাঁড়ালিয়া মোড় থেকে আমরা বাম দিক অর্থাৎ পূর্ব দিক ধরেছি। অবশ্য ঠিক পূর্ব দিক নয়, গুগল বলছে আমরা এখন চলেছি উত্তর-পূর্ব কোণে। যাবো বড় আটাগীয়া। কামদেবপুর থেকে দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার।

এই গ্রামটির নাম মহেশপোতা। কামদেবপুর শিব মন্দির থেকে কাঁড়ালিয়া মোড়ের দূরত্ব প্রায় ২.৫ কিলোমিটার আর কাঁড়ালিয়া থেকে বড় আটাগীয়া'র দূরত্ব ৩.৫ কিলোমিটারের মতো। এই ছয় কিলোমিটারের রাস্তায় বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। কাঁড়ালিয়া, মহেশপোতা, বহিরগাছি, বাস্ততলা, বাস্ততলা মোড়, ড্যাংড্যাঙে, তার পর হল বড় আটাগীয়া। কাঁড়ালিয়া গ্রাম আমরা পেরিয়ে এসেছি। গ্রামটি রাজ্য-সড়ক থেকে একটু ভেতরে। সড়ক ধরে আসার সময় ঠিক মতো বোঝা যায় না। আর আগেই বলেছি এই গ্রামটি হল মহেশপোতা। গ্রামটি একটু ফাঁকা ফাঁকা। খুব বেশি বাড়ি ঘর দেখতে পাচ্ছি না। আবার যেটুকু দেখা যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে, খুব একটা বর্ধিষ্ণু গ্রাম নয়। অথবা এরকম ও হতে পারে, এই গ্রামটাও হয়তো কাঁড়ালিয়া'র মতো রাজ্য সড়ক থেকে একটু ভেতরে। সেরকম হলে আমার অনুমান ভুল হয়ে যাবে। তবে আমার অবশ্য এইরকম ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যেতে একটু বেশি ভালো লাগে। রাস্তার দুই ধারেই গ্রাম হলে গাড়িতে যাওয়ার সময় কেবল ইট-কাঠ-পাথরের বাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। এই যে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ তা যেন কোথায় হারিয়ে যায়, যা আমার মনকে একদমই আনন্দ দেয় না। ঘুরতে যাওয়ার মজাটাই কেমন যেন নষ্ট হয়ে যায়।

আমার প্রচুর প্রশ্ন, পুরো রাস্তাই প্রায় রূপকের সাথে বকবক করেই চলেছি। অবশ্য রূপক'ও ভীষণ কথা বলতে ভালোবাসে। কোনও একটা বিষয় নিয়ে কিছু একটা জানতে চাইলেই হল। রূপক সেটা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে যেতে পারে। আজও তার অন্যথা হল না। আমি কেবল গ্রাম গুলোর নাম জানতে চেয়েছি। ও আমাকে প্রায় গোটা এলাকার একটা ছোটোখাটো বিবরণ দিয়ে দিল। 

বাঃ!! এই দেখুন এখানে একটা নতুন মন্দির তৈরি হচ্ছে। ... ... যাইহোক যেটা বলছিলাম। রূপকের বিবরণ অনুযায়ী প্রায় মহেশতলা লাগোয়া এই গ্রামটার নাম হল বহিরগাছি। বেশ সুন্দর গ্রাম। মনে হচ্ছে এই গ্রামটা একটু বড়। রাস্তার দুই ধারে অনেক বাড়ি। সেগুলোর আবার বেশির ভাগই পাকা, ছাদ করা। এখানে রাস্তায়ও প্রচুর মানুষজন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রাস্তার ধারে বেশ কয়েকটি টোটো আর মোটর সাইকেলও চোখে পড়লো। ছোটোখাটো কয়েকটা মুদিখানা দোকানও রয়েছে দেখছি। এই গ্রামে একটা স্কুলও রয়েছে। তাই মহেশতলার তুলনায়, এই গ্রামকে একটু বর্ধিষ্ণু বলা যায়। ... ... 

আমরা এবার বাস্ততলা ঢুকছি। এই গ্রাম টি বেশ বড়। প্রচুর মানুষের বাস। সকলেই প্রায় মুসলিম সম্প্রদায় মানুষ। রফিক ভাই এই গ্রামেই থাকে। এই হল বাস্ততলা মোড়। এখান থেকেই বাম দিকে গ্রামের ভিতরে গেলে রফিক ভাইয়ের বাড়ি। আমি একবারই গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকবছর আগে। মোড় থেকে অনেকটা ভিতরে যেতে হয়। প্রায় দেড় কিলোমিটার মতো হবে। এখন তো দেখছি বাস্ততলা মোড় বেশ জমজমাট। বেশ কয়েকটা দোকানপাট রয়েছে। আগে এতটা জমজমাট ছিল না। আমি প্রায় বছর পনেরো আগের কথা বলছি, তখন এই মোড়ে হাতে গোনা দু-চারটে দোকান। ইলেকট্রিক আলো নেই বললেই চলে। থাকলেও ভোল্টেজ এতো কম যে সন্ধ্যাবেলাতেই এই মোড় অন্ধকারে ঘুটঘুট করতো। আর আজ দেখুন ... ...

এই হল ড্যাংড্যাঙে মাদ্রাসা স্কুল। আমরা ড্যাংড্যাঙে ঢুকে পরেছি। বাস্ততলা আর ড্যাংড্যাঙে গ্রাম দুটি প্রায় লাগোয়া। ভালো করে খেয়াল না করলে বোঝাই যায় না। ... ... ড্যাংড্যাঙে মোড় তো দেখছি আরও বেশি জমজমাট। রাস্তায় প্রচুর মানুষ। প্রতিটা চায়ের দোকানেই বেশ ভীড়। মোটর সাইকেল আর টোটোর সংখ্যাও বেশ বেশি। আশেপাশে প্রচুর দোকানপাট। নিত্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সব কিছুই দেখছি এখানে পাওয়া যাচ্ছে। মিষ্টির দোকান, সবজি, ফল, মুদিখানা, মনিহারী, চাষ-আবাদের যন্ত্রপাতি, সার-বীজ, মোবাইল, শাড়ি-জামা-জুতো এমন কি গোটা তিনেক সোনার গহনার দোকানও রয়েছে দেখছি। বোঝাই যাচ্ছে, পার্শ্ববর্তী বাস্ততলা আর ড্যাংড্যাঙের মানুষজন তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই এখান থেকে পেয়ে যান। কেনাকাটার জন্য তাদের আর মাটিয়ারী দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না। ...

আমরা বড় আটাগীয়া ঢুকছি। এই অঞ্চলে মাটিয়ারী'র পরে সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রাম হল বড় আটাগীয়া। বাঁ দিকে আটাগীয়া স্কুল। আর ডান দিকে মন্দিরের চূড়া দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রূপক এখানেই পাইকারি দোকান থেকে ওর দোকানের জন্য মালপত্র কিনবে। চলুন সেই ফাঁকে আমরা মন্দিরটা দেখে আসি। ... ... বাঃ !! মন্দিরটা বেশ বড়। বোঝা যাচ্ছে, নতুন তৈরি হয়েছে। বেশ ঝকঝকে, আর রংচঙে। এটি শিব মন্দির, আর বাঁ দিকে মনে হচ্ছে ওটা দুর্গা দালান। 

মন্দিরের সামনে একঝাঁক কচিকাঁচার সঙ্গে দেখা। ক্যামেরা দেখে ছবি তোলার জন্য খুব উৎসাহী। এদিকে আমার ক্যামেরায় ব্যাটারির অবস্থা খুবই খারাপ। একদমই চার্জ নেই। তাই ইচ্ছা থাকলেও আজকের এই পর্ব আর খুব বেশি বড় করতে পারলাম না, এখানেই শেষ করলাম। পরের পর্বে আবার দেখা হবে। ততদিন সকলে ভালো থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। যদি আজকের পর্ব আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে প্লীজ লাইক করবেন এবং আমার চ্যানেল টি  সাবস্ক্রাইব করবেন। বাই......

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০২৮ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 028]
৯ই আশ্বিন, ১৪৩০; (27th September, 2023), বুধবার।


© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০২৯ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 029]
৯ই কার্ত্তিক, ১৪৩০; (27th October, 2023), শুক্রবার।


সুপ্রভাত বন্ধুরা, কামদেবপুরের ডাঙায় আমার আরও একটা নতুন ভ্লগে সকলকে স্বাগত জানাই। আশা করি সকলেই কুশলে আছেন। 

এখন সকাল প্রায় দশটা। বেশ বেলা গড়িয়েছে। আমি এখন যাচ্ছি, ছোট দাদুর কাঁঠাল তলার মাচালে। আজ সকালে রাখু কে সঙ্গে নিয়ে ছোটকাকা কলের ধারে গিয়েছিলেন। কলের ধারের জমি গুলোতে রাখুরা খুব তাড়াতাড়ি চাষ দেবে। তার আগে ছোটকাকা আজ কলের ধারের জমি গুলো জল দিয়ে ভিজিয়ে দেবেন। সেই জন্যই পাইপ পেতে দিতে রাখু কাকার সাথে মাঠে গিয়েছিল। আর আমিও রাখুদের সঙ্গী হয়েছিলাম। পাইপ পাতা হয়ে গেলে আমি আর রাখু টিফিন খেতে বাড়ি ফিরে আসি, আর কাকা এখনো কলের ধারে রয়েছেন। 

যাইহোক, এতক্ষণ তো বলছিলাম আজ সকালের কথা। এখন অবশ্য বেলা বেশ বেড়েছে। রাখু জলখাবার খেয়ে অনেকক্ষণ মাঠে চলে গেছে। বরং আমারই খেতে একটু বেশি সময় লেগে গেল। খেয়েদেয়ে আমি এখন মাঠে চলেছি। তবে ভাবছি এখনই আমি রাখুদের কলের ধারে যাব না। সকালবেলা মাঠ থেকে ফেরার সময় দেখেছিলাম, বৈদ্যনাথ কাকা, ওনার কলা বাগানের সব পুরনো গাছ কেটে ফেলে দিয়ে জমি পরিস্কার করছেন, নতুন করে কলাগাছ লাগাবেন বলে। অজিত কাকাকে দেখেছিলাম শাবল-কোদাল নিয়ে বাগানের দিকে যেতে। ভাবছি, একবার সেখান থেকে ঘুরে তারপর রাখুদের কলের ধারে যাব। বৈদ্যনাথ কাকা'র কলা বাগান, ছোট দাদুর কাঁঠাল তলার উত্তর দিকে, কাকার নিজের কলঘরের পাশে। সেকারনেই আমি এখন চলেছি কাঁঠাল তলার মাচালে। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর বাগানের দিকে যাওয়া যাবে। এই তো কাঁঠাল তলায় চলে এসেছি। বুড়ো কাকা আর রতন কাকা দেখছি মাচায় বসে রয়েছেন।

তরুণ দাদা'ও একটু বিশ্রাম নিয়ে মাঠের দিকে এগোলেন। আসলে কাঁঠাল তলার এই জায়গাটা বেশ ঠাণ্ডা। সবসময়ই বেশ হাওয়া বয়ে যায়। বসে থাকলে ভীষণ আরাম লাগে। তাই আশে পাশের মাঠে যারা কাজ করতে আসেন, তাদের বিশ্রামের জায়গা হল এই কাঁঠাল তলা। বৈদ্যনাথ কাকা এখানে আবার একটা বাঁশের মাচাল তৈরি করেছেন। কাজের ফাঁকে তার উপরেই সকলে বসে বিশ্রাম নেন। এই যেমন, এতক্ষণ সবাই মাচালে ছিলেন। ... ...  এই দেখুন, এখানে মাটিতে গর্ত করে দুটো "উনান" করা আছে। শীতকালে এখানেই সকলে মিলে "পৌষল্যা" বা বনভোজন করা হয়। আবার ফাল্গুন-চৈত্র মাসে সকলে এই কাঁঠাল তলায় বসেই "মাঠ পালোনী" করেন। ... ... যাইহোক, আবার আজকের কথায় ফিরে আসি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সকলে আবার আস্তে আস্তে কাজে ফিরছেন। বৈদ্যনাথ কাকা তো অনেক আগেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বুড়ো কাকা কয়েকছড়া কলা মাথায় করে নিয়ে বাড়ির দিকে এগোলেন। রতন কাকাও কিছুক্ষণের বিশ্রাম শেষে কাজে ফিরলেন। আসলে একটা ফসল ঘরে তোলার পর, দিন পনেরো-কুড়ি জমিকে বিশ্রাম দিয়ে সবাই আবার আস্তে আস্তে মাঠমুখী হয়েছেন। নতুন করে চাষ দিয়ে আবার জমি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেজন্যই অবশ্য মাঠে এখন কোনও ফসল নেই, মাঠ এখন ফাঁকা। যাইহোক, ওই যে দূরের কলা বাগান, ওখানেই অজিত কাকা কাজ করছেন। বাগান টা বৈদ্যনাথ কাকার। আজ, অজিত কাকা বাগানের সব পুরনো গাছ তুলে ফেলে বাগান পরিষ্কার করছেন। তারপর সেখানে নতুন করে কলার চারা বসাবেন। চলুন ওই বাগানের দিকে যাই, অজিত কাকার সাথে একটু গল্প করে আসি। দেখে আসি উনি কি ভাবে বাগান পরিষ্কার করছেন ... ...

অজিত কাকা বলছিলেন, বাগানের গাছ গুলো প্রায় দুই বছরের পুরনো। দুই বছরের পুরনো বাগান বলেই মনে হয় বাগানের ফলন কম হচ্ছে। সেজন্যই বৈদ্যনাথ কাকা সব গাছ তুলে ফেলে দিয়ে, জমি পরিষ্কার করে নতুন করে বাগান তৈরি করছেন। নতুন বাগানে গাছ বড় হতে একটু সময় লাগলেও, নতুন গাছে ফলন বেশী হয়, আবার কলার কাঁদির সাইজ ও পুরনো গাছের তুলনায় বড় হয়। কাঁদি বড় হলে দাম ভালো পাওয়া যায়। অজিত কাকা তো বলছিলেন, এটা "সিঙ্গাপুরী" কলার বাগান ছিল। "ঠোঁটে" কলা বা "কাঁঠালি" কলার তুলনায় সিঙ্গাপুরী কলার দাম একটু কম, তবে সিঙ্গাপুরী কলার ফলন অনেক বেশী। ... ... বাগানটা বেশ বড়, অনেক গাছ। শাবল দিয়ে সব গাছ তুলে বাগান পরিষ্কার করতে অজিত কাকার আজ প্রায় সারাদিন লেগে যাবে। ওদিকে রাখুদের মনে হয় এতক্ষণে জমি ভেজানোর কাজ শেষ হয়ে  গেছে। আমি এবার সেদিকেই যাব। ওইতো দূরে কাকাকে দেখছি, এখনো মাঠে রয়েছেন। তবে এই পর্ব এখানেই শেষ করব। বাকিটা পরের পর্বে। ততদিন সকলে ভালো থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আর যদি আজকের পর্ব আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে প্লীজ লাইক করবেন এবং আমার চ্যানেল টি  সাবস্ক্রাইব করবেন। বাই......

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০৩০ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 030]
৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০; (26th November, 2023), রবিবার।


নমস্কার বন্ধুরা, কামদেবপুরের ডাঙা মাঠ থেকে আরও একবার আমার নতুন ভ্লগে সকলকে স্বাগত জানাচ্ছি, আমি প্রবীর রাজ, দ্যা লেজি ভ্লগার । আশা করি সকলেই কুশলে আছেন। 

অজিত কাকার সঙ্গে, গত পর্বেই আপনাদের সাথে আলাপ হয়েছিল। বেশ পরিশ্রমী মানুষ, আবার বেশ মিশুকে। যত পরিশ্রমের কাজই করুন না কেন, কোনও কিছু জানতে চাইলে হাসি মুখে ঠিক উত্তর দেবেন। আজ সকাল থেকেই অজিত কাকা, বৈদ্যনাথ কাকার এই তিন বছরের পুরনো সিঙ্গাপুরী কলাবাগান পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছেন। বাগানের গাছগুলো পুরনো হয়েছে। তাই ফলন কম হচ্ছে। সেকারনেই সব পুরনো কলা গাছ তুলে ফেলে দিয়ে অজিত কাকা নতুন করে চারা কলাগাছ বসাবেন। ... ... এই ছোট চারা কলাগাছ গুলোকে এখানে সবাই "তেওড়" বলে। নতুন করে বাগানে তেওড় বসানোর আগে পুরনো গাছ ভালো করে মাটি থেকে গোঁড়া সমেত উপড়ে ফেলতে হয়। না হলে পুরনো গাছের গোঁড়া পচে গিয়ে বাগানের মাটি খারাপ করে দিতে পারে। আর এটাই হল যত খাটুনির কাজ। শাবল দিয়ে প্রতিটা গাছ গোঁড়া সমেত উপড়াতে হবে। অবশ্য অজিত কাকা যা পরিশ্রমী মানুষ, একদিনেই হয়তো পুরো বাগান পরিষ্কার হয়ে যাবে। 

ওদিকে আবার ছোটকাকা আর রাখু দুজনে মিলে কলের ধারের জমিতে নতুন করে চাষ দেওয়ার আগে, আজ সকাল সকাল জমি ভেজানোর জন্য পাইপ পেতেছেন। সকাল থেকে আমিও সেখানে ছিলাম। মাঝে একবার বাড়িতে জলখাবার খেতে এসেছিলাম। খাবার খেয়ে কলের ধারে যাওয়ার পথেই অজিত কাকার বাগান পরিষ্কার করা দেখতে এসেছিলাম। ওদিকে রাখুদের মনে হয় এতখনে জমিতে জল ধরানো হয়ে গেছে। ওইতো ছোটকাকা মনে হচ্ছে পাইপ গোটাচ্ছেন। দূরে অদি কেও দেখতে পাচ্ছি পাকুড় গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে। চলুন, এবার সেদিকে যাওয়া যাক।

জমিতে পাইপ পাতা যেমন কঠিন কাজ, তার থেকেও কঠিন কাজ হল পাইপ গোটানো। ভিজে পাইপ গোটানোর সময় পাইপে অল্প হলেও জল থেকে যায়, ফলে পাইপ ভারী হয়ে যায়। আবার ভালো করে না গোটালে পাইপে হাওয়া ঢুকে থাকে। পাইপ ঠিক মতো ভাঁজ হতে চায় না। 

কাকা একটা পাইপের রোল মাথায় করে নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। বড় পাইপের রোলটা নিয়ে রাখু বাড়ি ফিরছে, সঙ্গে আমি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, অদি খুব ছোট। আল পথে হেঁটে যেতে পারছে না। জমি ভেজানো হয়েছে বলে জমির আল কাদা হয়ে গেছে। সেই পথে অদির হাঁটতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। আবার ছোট ছোট পায়ে হাঁটছে বলে সময়ও বেশী লাগছে। যখন ও মাঠে এসেছিল, রাখুর কোলে চেপে এসেছিল। তখন রাখুর মাথায় পাইপের রোল ছিল না। এখন তাই বাধ্য হয়ে অদিকে পিঠে নিতে হল। কিন্তু এভাবে কি অদি পুরোটা পথ যেতে পারবে !!

অদি ওর বাবার পিঠে এভাবে বেশিক্ষণ চেপে থাকতে পারছে না। খালি পরে যাচ্ছে। আসলে ও ভীষণ ছোট। ওর পক্ষে এভাবে পিঠে ঝুলে যাওয়া বেশ কঠিন কাজ। আর একটু বড় হলে হয়তো এই অসুবিধাটা হত না।

ছোট দাদুর কাঁঠালতলা। আমি একটু আগে আগে পৌঁছে গেছি। অদিরা পিছনে আসছে। রাখুর পিঠে চেপে আসতে, অদির খুব অসুবিধা হচ্ছে। খালি পরে যাচ্ছে। তাই রাখু ওর সাথে আস্তে আস্তে হেঁটে আসছে।

দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা। রোদের তেজ এখন বেশ বেড়েছে। হেঁটে আসতে ভালোই কষ্ট হচ্ছিল। বেশ গরম লাগছিল। তবে সকালে আকাশে মেঘ ছিল বলে রোদের তেজ এতোটা বেশী ছিল না। এখন তো বেশ ঘাম হচ্ছে। তাই আমরা এই কাঁঠাল তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এদিকে অরুণা ওর বাগান দেখাশোনা করে বাড়ি ফিরছে। আমাদেরও এবার বাড়ি ফিরতে হবে।  এখানে আবার কেউ বাগান পরিষ্কার করার পর, শুকনো গাছের পাতা গুলো জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তাই চারিদিক ধোঁয়ায় ভরে গেছে। বসে থাকতে একটু কষ্ট হচ্ছে। এদিকে আমার ক্যামেরার ব্যাটারির ক্ষমতাও শেষ। তাই ভ্লগটা আর বেশী বড় করবো না। এখানেই শেষ করবো। আমাকে এখন রাখুদের সাথে বাড়ি ফিরতে হবে। সকলে ভালো থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আর যদি আজকের পর্ব আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে প্লীজ লাইক করবেন এবং আমার চ্যানেল টি  সাবস্ক্রাইব করবেন। পরের পর্বে আবার দেখা হবে। বাই ......

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


|| Page 01 |Page 02 |Page 03 || Page 04 || Page 05 || Page 06 || Page 07 ||