The Lazy Vlogger 04

 

      আমার ইউটিউব ভ্লগ [My Youtube Vlog] : 04

Prabir Kumar Das | The Lazy Vlogger

|| Page 01 |Page 02 |Page 03 || Page 04 || Page 05 || Page 06 || Page 07 ||



 কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০১৬ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 016]
১৯ই পৌষ, ১৪২৯; (4th January, 2023), বুধবার।


... নমস্কার বন্ধুরা। আশাকরি সকলেই ভাল আছেন। আমি প্রবীর। দা লেজি ভ্লগার। কামদেবপুরের এই বিশাল বাঁশ বাগানে আপনাদের সকলকে স্বাগত। 

... আজ অবশ্য আমি ঠিক করেছি, কোনও content create করবো না। বরং আজ আমি পুরো ভ্লগে চুপচাপ থাকবো। আসলে কেন জানি না, আজ মনটা ভীষণ অস্থির অস্থির করছে। আর মন অস্থির হলেই আমায় নিঃসঙ্গতা পেয়ে বসে। তখন মনের এই অস্থিরতা বা নিঃসঙ্গতা কাটাতে আমি এই বাঁশ বাগানে চলে আসি। বিশাল বাঁশ বাগান। নীল আকাশের নিচে  লম্বা বাঁশের সারি দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার নিচে পাখিরা তাদের রঙ্গিন ডানা মেলে এদিক সেদিক উড়ে যাচ্ছে। এখানে মানুষের কোনও কোলাহল নেই। চারদিক নিস্তব্ধ, চুপচাপ। কেবল বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ, বাঁশে বাঁশে ঠোকাঠুকির ঠক ঠক শব্দ আর পাখির কিচিরমিচির। আপনারাও কান পেতে শুনুন, সব শুনতে পাবেন। এইজন্যই ঠিক করেছি, এই ভ্লগে আজ আমি চুপচাপ থাকবো। আজ কথা বলবে দখিনা বাতাস, আজ কথা বলবে বাঁশ বাগান  আর সেগুনের বন, আজ কথা বলবে চেনা অচেনা পাখির দল আর দুষ্টু কাঠবিড়াল। আমি চুপচাপ শুনবো, আপনাদেরও শোনাব। যারা ইট কাঠ পাথরের শহরে বসেও এই নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে চান, চলে আসতে পারেন আমার সাথে। কথা দিচ্ছি, আশাহত হবেন না ... ... 

... আর সবশেষে আবারও বলছি, যদি এই ভ্লগটি আপনাদের ভাল লাগে, তাহলে অবশ্যই লাইক করবেন, এবং আমার চ্যানেল টি subscribe করবেন। বাই ...

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০১৭ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 017]
১লা মাঘ, ১৪২৯; (16th January, 2023), সোমবার।


... সুপ্রভাত বন্ধুরা। আরও একবার, কামদেবপুরের ডাঙামাঠে আপনাদের সকলকে স্বাগত। আমি প্রবীর, দা লেজি ভ্লগার। কেমন আছেন সকলে? আশা করি খুভ ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। অবশ্য শহুরে ইঁট কাঠ পাথরের জঙ্গল ছেড়ে এই কামদেবপুরের বাঁশ বাগানে এলে আমি খুব ভালোই থাকি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সবসময় তা সম্ভব হয় না। তবে সময় পেলেই শহুরে কোলাহল থেকে ছুটি নিয়ে, ছুটে চলে আসি এই বাঁশ বাগানে, এই ধানের ক্ষেতে, মুসুরি ভুঁই কিংবা সেগুনের জঙ্গলে। ভীষণ ভালো লাগে।

... আমার সামনে রতন কাকা, মাথায় বিশাল বোঝা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মাঠে চলেছেন। মশারির জাল। মনে হয় রতন কাকাও আজ মুসুরি ঝাড়বে।

... আগের ভ্লগে আপনাদের বলেছিলাম, মাঠে অস্থায়ী খামার করতে হলে এই জাল ভীষণ জরুরী। ফসল ছড়িয়ে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে, মাঠে এই জাল বিছিয়ে তার উপরেই খামার করতে হয়। রতন কাকা মাথায় সেই জালের বোঝা নিয়েই চলেছেন। অন্তত গোটা দুয়েক জাল তো হবেই, তিনটেও হতে পারে। 

... বাঃ !! এক ঝাঁক সাদা বক। ভীষণ ভালো দেখতে লাগছে। নতুন করে মাঠে চাষ দেওয়ার আগে এখন মাঠ ফাঁকা। সেকারণে সারা রাত শিশির পরার পর, সকালে যখন রোদ ওঠে, তখন মাটির নিচে যত পোকা থাকে, সেগুলো বের হয়ে আসে। আর সেই পোকা গুলো খেতেই এই সময় মাঠে প্রচুর পাখির আনাগোনা হয়। বক, দোয়েল, ফিঙে, শালিক, বুলবুলি ছাড়াও অনেক চেনা অচেনা পাখি। এদের কিচির মিচির ডাকেই মাঠ সব সময় ভরে থাকে।

... যাই হোক আমার এই ভালো লাগা, ভালো থাকা এসব নিয়ে অন্য কোনও একদিন আলোচনা করা যাবে। বরং এখন চলুন আজকের ভ্লগ টা শুরু করি। অনেক দেরি হয়ে গেছে। রতন কাকা বাঁ দিকে চলে গেলেন। মনে হয় এখানেই খামার করবেন। আর আমার গন্তব্য সেই কলের ধার। সেখানেই সকলে মুসুরি খামার করেছে। সবাই এতক্ষণে প্রায় মাঠে পৌঁছেও গেছেন। মনে হয়, সৃষ্টি'ও ওর ট্র্যাক্টর আর থ্রেশার মেশিন নিয়ে পৌঁছে গেছে। হয়তো কাজও শুরু হয়ে গেছে। সময় মতো না পৌঁছালে নিজেও কিছু দেখতে পাব না, আর আপনাদেরও কিছু দেখাতে পারব না। তাই চলুন পা চালিয়ে হাঁটা যাক।

... মনে হয়, খুব বেশি দেরি হয় নি। আমি ঠিক সময়েই পৌঁছতে পেরেছি।  রফিক ভাই'রা সবে মাথায় গামছা জড়িয়ে কাজ শুরু করল। আসলে মুসুরি ঝাড়তে সময় একটু কম লাগে। সর্ষে বা ধানের তুলনায় মুসুরি গাছ বেশ নরম। আবার গাছ একটু ছোট হয়। তাই মুসুরি ঝাড়তে তুলনায় কম সময় লাগে। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যায়। সেই কারণেই একই দিনে সকলে খামার করে মুসুরি ঝেড়ে নেয়। এতে সময় যেমন বাঁচে তেমন পরিশ্রমও কম হয়, আবার খরচাও কিছুটা কমে। যাই হোক, প্রথমে ছোটকাকার খামারে কাজ শুরু হয়েছে। এরপর একে একে বাকি খামারে কাজ শুরু হবে। ছোটকাকা ছাড়া পীযূষ দের আর ওম দের মুসুরিও আজ ঝাড়া হবে। তবে আশা করা যায়, খুব বেশি সময় লাগবে না, তাড়াতাড়ি সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। 

... রফিক ভাইরা আজ খুব তাড়াহুড়ো করছে। একসাথে বেশি বেশি করে মুসুরি মেশিনে চাপিয়ে দিচ্ছে। আসলে আজ আকাশ একটু মেঘলা, ঠিক মতো রোদ ওঠেনি। সেই কারণে আজ কাজ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। সারা রাত শিশিরে মুসুরি গুলো মাঠেই পরে ছিল বলে একটু নরম ছিল। সকালে ভালো ভাবে রোদ উঠলে একটু সুবিধা হতো। রোদের তেজ ঠিক মতো থাকলে যে কোনও ফসল ঝাড়তে সুবিধা হয়। ভালো ভাবে ঝোড়ে যায়, না হলে সময় বেশি লাগে। এদিকে আবার অনেক গুলো খামারের কাজ একদিনে শেষ করতে হবে। সে কারণেই রফিক ভাইরা তাড়াহুড়ো করছিল। কিন্তু মেশিনে একসাথে অনেক মুসুরি চাপিয়ে দিলে মেশিন জ্যাম হয়ে যায়। সেই জন্যই সৃষ্টি বার বার হাত তুলে রফিক ভাইদের থামিয়ে দিচ্ছে। তবে সেরকম কিছু এখনো পর্যন্ত ঘটে নি। কাজ ভালো ভাবেই এগোচ্ছে। এদিকে ছোটকাকার একবস্তা মুসুরি ঝাড়াও হয়ে গেল। রফিক ভাই সেই বস্তা সরিয়ে নিলে, কাকা অন্য একটা খালি বস্তায় বাকি মুসুরি ভর্তি করা শুরু করল। তবে রাখুকে আজ মাঠে দেখছি না। মনে হয় এখনো মাঠে এসে পৌঁছায় নি। অথবা ওদের দ্বিতীয় খামারেও থাকতে পারে। মাঠে আসার সময় তো দেখে এলাম, সেখানে এখনো মুসুরি জড়ো করাই হয় নি। হয়তো সেখানেই রাখু কাজ করছে। 

... ছোট কাকার এই খামারের কাজ শেষ। ট্র্যাক্টর নিয়ে এবার অন্য কোথাও যাওয়ার পালা। মনে হয় ট্র্যাক্টর এবার হারাধন দাদার মুসুরি ঝাড়তে যাবে। এদিকে ছোট কাকা ভীষণ রেগে আছেন। মনে হচ্ছে মুসুরি ঝাড়া সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে রফিক ভাইয়ের সাথে ছোট কাকার একটু মনোমালিন্য হয়েছে। অবশ্য অনেক কাজের মধ্যে মাঝে মাঝে এরকম অল্প স্বল্প ঘটনা ঘটে, আবার মিটেও যায়। এসব সবসময় মনে রাখলে চলে না। যাইহোক সৃষ্টি ট্র্যাক্টর নিয়ে চলে যাচ্ছে। চলুন ওকে অনুসরণ করা যাক।

... সৃষ্টি ট্র্যাক্টর চালু করে দিয়েছে। একই সাথে রফিক ভাই'রা মুসুরির বোঝা থ্রেসার মেশিনে দিতে শুরু করে দিল। হারাধন দা'র জমির মুসুরি ঝাড়ার কাজ শুরু হল। এখানে অবশ্য অনেকেই রয়েছেন। রফিক ভাইরা দুজনে যেমন রয়েছেন, তেমন সৃষ্টি আছে, পীযূষ আছে, সর্বোপরি হারাধন দা নিজে উপস্থিত আছেন। ফলে এখানে কাজ বেশ ভালো গতিতেই এগোবে মনে হয়। তবে এখনো পুরোদমে কাজ শুরু হয় নি, রফিক ভাই'রা কেবল দুজনে মুসুরির বোঝা মেশিনে ঠেলে দিচ্ছে। 

... অবশেষে হারাধন দা নিজে এসে কাজ ধরল। এবার কাজের গতি বাড়বে। অবশ্য না ধরে উপায় নেই। হারাধন দা'র এই খামারে দেখছি প্রচুর মুসুরি জড়ো করে রাখা আছে। মনে হয় জমির পরিমাণ একটু বেশি। সেকারণে ফসলের পরিমাণও বেশি হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই হারাধন দাদা আর পীযূষ দুজনেই কাজে হাত লাগিয়েছে। আর আমি চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে এঁদের কাজ দেখছি। অবশ্য চুপচাপ দেখা ছাড়া কোনও উপায়ও নেই। এমনিতেই ট্র্যাক্টর যখন চলে তখন প্রচণ্ড আওয়াজ হয়। এখানে আবার ট্র্যাক্টরের সাথে থ্রেশার মেশিনটাও চলছে। তাই এত শব্দ হয় যে পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তি যদি চিৎকার করেও কথা বলে তবুও কিছু শোনা যায় না। সেকারণে সবাই চুপচাপ কাজ করে যায়। কেউ কোনও কথা বলে না।                       
... অবশ্য আমি কেবল চুপচাপ দাঁড়িয়ে এঁদের কাজ দেখছি তা নয়, একই সাথে আমি সেই ছবি ক্যামেরায় ধারন করে আপনাদেরও তা দেখানোর চেষ্টা করছি। আসলে আজ আকাশ একটু মেঘলা। সেকারণে ন্যাচারাল লাইটের পরিমাণ বেশ কম। এদিকে আবার আলো কম থাকলে আমার gopro ছবি তুলতে বেশ ঝামেলা করে। ছবি সবসময় কালো হয়ে যায়। আজও বেশ বুঝতে পারছি, সেই ঝামেলাই হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। 

... পীযূষ, হারাধন দা'র ছেলে। থ্রেশার মেশিন থেকে ফসল ঝাড়ার পর যে মুসুরি গুলো বেড়িয়ে আসছে, সেগুলো বস্তায় ভরছে। কাজটা অবশ্য খুব সোজা নয়। প্রথমত মেশিনের এই বিশাল আওয়াজ, তার সাথে উপরি পাওনা প্রচুর ধুলো, এরই মধ্যে মনোযোগ দিয়ে স্থির হয়ে বসে বস্তা ভর্তি করা বেশ চাপের। বিশেষ ভাবে একটা বস্তা ভর্তি হয়ে গেলে, সেটা সরিয়ে দ্বিতীয় বস্তা ধরা ... ... বেশ ঝামেলায় পরতে হয়। তখন পাশে আরও একজন থাকলে বেশ সুবিধা হয়। নাহলে ফসল ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এখন অবশ্য সৃষ্টি এখানে উপস্থিত ছিল। ও পীযূষকে  ভর্তি বস্তা সরিয়ে খালি বস্তা ধরতে সাহায্য করল। সৃষ্টির এখন হাত খালি। সাধারণত হুলার মেশিন চালানো থেকে শুরু করে মেশিনে ফসল ঠেলে দেওয়ার পুরো কাজটা সৃষ্টি নিজেই করে থাকে। কিন্তু এখন ওর কাজের দায়িত্ব হারাধন দা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। সেই কারণেই সৃষ্টি এখন ফ্রি ভাবে ঘুরে বেড়াতে পারছে। 

... থ্রেশার মেশিনে ফসল ঝাড়তে সময় কম লাগে বটে, কিন্তু এর কিছু অসুবিধাও আছে। যে অসুবিধার কথা সব থেকে আগে বলতে হয়, সেটা হল মেশিনের বিকট কান ফাটানো শব্দ। এছাড়া দ্বিতীয় সমস্যা হল প্রচুর ধুলো। ঝাড়ার পর মেশিন থেকে যে ধুলো সমেত নাড়া গুলো বের হয়ে আসে, তা দেখে অনেক সময় আমার তো মনে হয়, ছোটখাটো একটা ধুলোঝড়। এই বৈরি পরিবেশে কাজ করা কিন্তু বেশ কঠিন। আমাদের মতো শহুরে মানুষের কাছে এককথায় অসম্ভব। আবার তুলনায় মুসুরির গাছ বেশ ছোট এবং নরম। ফলে ঝাড়ার পরে মেশিন থেকে যে নাড়া বের হয়ে আসে, তার বেশীর ভাগই ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যায়। সেজন্যই মুসুরি ঝাড়ার সময় একটু বেশি ধুলো তৈরি হয়। 

... ওম। এত আওয়াজ আর ধুলোর মাঝেও ঠিক সেই ট্র্যাক্টরের উপরে চুপ করে বসে আছে। আসলে ট্র্যাক্টর ওর এত প্রিয় যে, অন্য কোথায় বসতে বললেও ও কথা শুনবে না। ঠিক সেই ট্র্যাক্টরে এসেই বসবে। যাই হোক মুসুরির নাড়া নিয়ে যে কথা বলছিলাম ... ... মেশিনে মুসুরি ঝাড়ার ফলে নাড়া ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যায়। আগে যখন গরু দিয়ে মুসুরি মাড়াই করা হতো, তখন কিন্তু এই সমস্যা ছিল না। প্রায় পুরো নাড়া গোটা থাকতো।  আসলে ফসল ঝাড়ার পর মুসুরির যে নাড়া পরে থাকে, তা গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। গরু মহিষেরও এই নাড়া বেশ পছন্দের। আজকাল মেশিনে ঝাড়ার কারণে প্রচুর গোখাদ্য নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু উপায় কিছু নেই, সময় এবং অর্থ বাঁচাতে সকলেই আজকাল মেশিনে ফসল ঝাড়া বেশি পছন্দ করে।

... থ্রেশার মেশিন জ্যাম হয়ে গিয়েছিল। আগেই আপনাদের বলেছিলাম, রফিক ভাই'রা আজ বড্ড তাড়াহুড়ো করছে। একসাথে অনেক অনেক মুসুরি মেশিনে দিয়ে দিচ্ছে। আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। সেকারণে মাঠে পরে থাকা মুসুরি ভালো করে গরম হয় নি। এখনো নরম আছে। আর এই নরম মুসুরি ঝাড়তে বেশ অসুবিধা হয়। ফল ঝোড়তে সময় লাগে। সেই কারণে অল্প অল্প করে মুসুরি মেশিনে দিতে হয়, না হলে মেশিনের রোলারে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এবারে সেই প্রবলেম টা'ই হয়েছে। রফিক ভাই'রা একসাথে অনেক মুসুরি মেশিনে দিয়ে দিয়েছিল। আসলে আজ প্রচুর কাজ। অনেকের মুসুরি হলার করতে হবে। এদিকে আকাশ মেঘলা থাকার জন্য কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হতে বেলা গড়িয়ে যাবে। সেজন্যই রফিক ভাই'রা তাড়াহুড়ো করছে। যাইহোক সৃষ্টি পুরো ব্যাপারটা সামলে নিয়েছে। মেশিনের রোলার পরিষ্কার করে নেওয়ার পর আবার কাজ শুরু হয়েছে। 

... হারাধন দা'র মুসুরি ঝাড়া শেষ। সৃষ্টি আর রফিক ভাই'রা ট্র্যাক্টর নিয়ে ওম'দের খামারে চলে গেছে।  ওখানে এতক্ষণে কাজও শুরু হয়েছে। এদিকে এখানে পীযূষ'রা মুসুরি'র বস্তা সহ জাল গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুশীল কাকা আর বুড়ো কাকা মুসুরির নাড়া জাল ভর্তি করে নিচ্ছে, গরুকে খাওয়াবে বলে। চলুন হাঁটতে হাঁটতে ওম'দের খামারের দিকে যাই। ওদের খামারে কি হচ্ছে, গিয়ে দেখি। ওম'দের পাশেই আবার রাখুদের আর একটা খামার রয়েছে। রাখু মনে হয় এতক্ষণে মাঠে চলে এসেছে। ওর সাথেও দেখা হয়ে যাবে। তবে এই ভ্লগটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। বাকি গল্প পরের ভ্লগে বলবো। এই ভ্লগ এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আর সবশেষে আবারও বলছি, যদি এই ভ্লগটি আপনাদের ভাল লাগে, তাহলে অবশ্যই লাইক করবেন, আপনাদের মতামত জানাবেন এবং আমার চ্যানেল টি subscribe করবেন। বাই ... 

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০১৮ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 018]
১০ই মাঘ, ১৪২৯; (25th January, 2023), বুধবার।


... নমস্কার বন্ধুরা। আমি প্রবীর, দা লেজি ভ্লগার। আমার ভ্লগে, আরও একবার আপনাদের সকলকে স্বাগত। আশাকরি আমার আগের ভ্লগ টা আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। অনেক বড় হয়ে যাচ্ছিল বলে সেই পর্বে সম্পূর্ণ অংশ দেখানো সম্ভব হয় নি। সেকারনে আজকের ভ্লগটি হল আমার আগের ভ্লগের পরবর্তী অংশ। গত পর্বেই আমরা দেখেছিলাম, যে হারাধন দাদার খামারের মুসুরি ঝাড়া শেষ করে সৃষ্টি ওর ট্র্যাক্টর আর মেশিন নিয়ে ওম দের খামারের দিকে গেছে। ওখানে তো দেখছি কাজও শুরু হয়ে গেছে। থ্রেশার মেশিনের আওয়াজও শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। চলুন সেদিকেই যাই।

... ওরে বাবা !! এখানে তো দেখছি মুসুরির পাহাড়। মনে হচ্ছে ভালোই সময় লাগবে। তবে কাজ বেশ কিছুটা এগিয়েছে। এতক্ষণে একবস্তা মুসুরি ঝাড়াও হয়ে গিয়েছে। ওম'এর দাদু ভর্তি বস্তার মুখ দড়ি দিয়ে ভালো করে বেঁধে রাখলেন। না হলে বস্তা উল্টিয়ে জমিতে মুসুরির ফল ছড়িয়ে যেতে পারে। আর ওম্কে তো দেখছি আজ দাদুকে সম্পূর্ণ ভাবে সাহায্য করছে। ওর দাদু যখন ভর্তি বস্তা মেশিনের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে মুখ দড়ি দিয়ে বাঁধছিল, তখন ওম নিজেই একটা খালি বস্তা নিয়ে মুসুরির ফল গুলো ভর্তি করা শুরু করল। এবারে ওকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ বড় হয়ে গেছে। 

... এখানে ভীষণ ধুলো উড়ছে। ওম'দের সারা গায়ে ধুলো আর মুসুরির ভুষি উড়ে এসে ভর্তি হয়ে গেছে। মাঠে এখন একটু হাওয়া দিচ্ছে। আবার ট্র্যাক্টর সহ মেশিনটাও এমনভাবে দাঁড় করানো হয়েছে যে মেশিনে মুসুরির গাছ দেওয়ার সময় শুকনো মুসুরির পাতা আর ধুলো এদিকে উড়ে আসছে। অবশ্য এখানে কিছু করারও নেই। মেশিনে ফসল ঝাড়ার সময় একটু ধুলো হয়। এতে আমার অসুবিধা হলেও সৃষ্টি বা রফিক ভাইদের এই পরিবেশে কাজ করার অভ্যাস রয়েছে। কষ্ট হলেও ওরা মানিয়ে নেয়। 

... যাই হোক এখানে মুসুরি ঝাড়া চলতে থাকুক, পাশের খামারে রাখু আর ছোটকাকা এখনো মুসুরি জড়ো করছে, চলুন সেদিকে যাওয়া যাক। গিয়ে দেখি সেখানে কি হচ্ছে।

এখানে সবাই চুপচাপ ! চার ভাগের তিন ভাগ জড়ো করা হলেও এখনো প্রায় এক ভাগ মুসুরি মাটিতে পরে রয়েছে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে। ওম'দের মুসুরি হলার করা হয়ে গেলেই সৃষ্টি মেশিন নিয়ে এখানে চলে আসবে। সেকারণে রাখুরা চুপচাপ মন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মুখে কোনও কথা নেই। এমন কি ছোটকাকাও আগের খামারের কাজ শেষ করেই এখানে রাখুদের সাহায্য করতে চলে এসেছেন।

... এদিকে রাখুদের এখনো সব মুসুরি জড়ো করা হয়নি, ওদিকে ওম'দের খামারে সৃষ্টি থ্রেশার মেশিন বন্ধ করে দিয়েছে। আর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে ওদের সব মুসুরি ঝাড়া হয়ে গেল। ... ... ঠিকই বলেছি। সৃষ্টি ট্র্যাক্টর নিয়ে চলে যাচ্ছে। এখন ও রাখুদের খামারে যাবে। ওখানে এবার কাজ শুরু হবে।

... দূরে সৃষ্টির ট্র্যাক্টর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রাখুদের খামারে কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে এখানে ওম ওর দাদুকে সাহায্য করছে। মনে হয় খালি বস্তা ছিল না বলে, কিছু মুসুরির ফল মাটিতে জালের উপর ছড়িয়ে পরে আছে। ওম সেই ফলগুলোই বস্তায় ভরতে দাদুকে সাহায্য করছে। 

... রাখুদেরও মুসুরি হলার করা শেষ হয়ে গেল। সব ফল বস্তায় ভর্তিও করা হয়ে গেছে। এবার জাল গোটানোর পালা। ছোটকাকা রফিক ভাইকে নিয়ে জাল গোটাছে।
ওদিকে ওমদেরও বস্তা ভর্তি শেষ। দূরে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, ওদেরও জাল গোটানোর কাজ চলছে। এবার মুসুরি ভর্তি বস্তা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পালা। এদিকে কোনও কারণে ছোট কাকা এখনো রফিক ভাইয়ের উপর ভীষণ রেগে আছে। মাঝে মাঝেই দুজনের মধ্যে তর্ক শুরু হয়ে যাচ্ছে। 

... বস্তার মুখ বাঁধা হয়ে গেল। আজকের মতো কাজ শেষ। রফিক ভাইরা এবার ভর্তি বস্তা গুলো বাড়ি পৌঁছিয়ে দিয়ে আসবে। একটা ছোট বস্তা রাখু মাথায় করে বাড়ি ফিরে চলেছে। চলুন ওর সাথে বাড়ি ফেরা যাক ... 

বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি। আগে এক গ্লাস জল খেতে হবে। তারপর ভালো করে স্নান, সারা গায়ে ধুলো ভর্তি। এই পর্ব এখানেই শেষ করলাম। পরের পর্বে আবার দেখা হবে। ততদিন ভালো থাকবেন, আনন্দে থাকবেন। আর যদি এই পর্বটি ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই Like করবেন, Comment করবেন, আর আমার চ্যানেলটি Subscribe করবেন। বাই। 

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০১৯ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 019]
২৪শে মাঘ, ১৪২৯; (8th February, 2023), বুধবার।


... সুপ্রভাত বন্ধুরা। আরও একটা নতুন পর্বে আপনাদের সকলকে স্বাগত। আমি প্রবীর, দা লেজি ভ্লগার। আজ মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমী, সরস্বতী পুজো। নরম রোদ, হালকা কুয়াশায় ঘেরা মিষ্টি সকাল, হলুদ শাড়ি, কুর্তা পাঞ্জাবী, সকাল থেকে নির্জলা উপবাস, আতপ চালের পিটুলি দিয়ে ঠাকুর তলায় আলপনা আর সব শেষে পুষ্পাঞ্জলি ... ... সবকিছু মিলিয়ে  প্রতিবারের মতো এবারও কামদেবপুর গ্রামের সকলে মেতে উঠেছে বাগদেবীর আরাধনায়। 

... তবে এত কিছুর মাঝেও কিশোরের ট্র্যাক্টর বসে নেই। এখন সবে সকাল সাড়ে ন'টা। বৈদ্য কাকা পুজোয় বসবেন সেই দুপুর বারোটায়। হাতে অনেক সময়। সেই ফাঁকে শ্যামল'দা কে সঙ্গে নিয়ে কিশোর চলেছে কাঁড়ালিয়া মাঠে, সর্ষে হলার করতে। পথে ইস্কুল ঘরের ডাঙায় আমার সাথে দেখা। অনেক দিন ধরেই আমার ইচ্ছা ছিল, ট্র্যাক্টরে চড়ে একটু দূরে কোথাও যাওয়ার। হঠাৎ সুযোগ এসে গেল। সেই মুহূর্তে অবশ্য আমার কাছে অ্যাকশান ক্যামেরাটা ছিল না। বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তবে মোবাইল ফোনটা রয়েছে। আজ ওটা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হবে। ছবির কোয়ালিটি একটু খারাপ হলেও মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। এই সুযোগ কিছুতেই ছাড়া যায় না। তাই কিশোরের এক ডাকেই চেপে বসলাম ওর ট্র্যাক্টরে। যাব বাঁধ পেরিয়ে সেই কাঁড়ালিয়া মাঠে। 

... কামদেবপুর গ্রাম এখানেই শেষ। ডান দিকের রাস্তা মাটিয়ারী'র দিকে চলে যাচ্ছে। ওটাই বাঁধের রাস্তা। সোজা রাস্তা কাঁড়ালিয়া মোড় চলে যাচ্ছে। এখান থেকেই কাঁড়ালিয়া গ্রামের শুরু। রাস্তার ডান দিকে যে মাঠ গুলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, ওদিকটা হল বিল মাঠ। শুনেছি কোনও এক সময় গঙ্গা নদী এখান দিয়েই বয়ে যেত। এখন গঙ্গা এখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। তবে গঙ্গা ছেড়ে চলে গেলেও এখনো প্রতি বছর বর্ষার সময় এই বিল মাঠের বেশির ভাগ অংশই গঙ্গার জলে ডুবে যায়। সেই সময় এই বিশাল বিল মাঠ দেখে মনে হয় যেন সমুদ্র। 

... মনে হচ্ছে আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছি। বাঁ দিকের ডাঙা মাঠে, জালের উপর সর্ষে জড়ো করা আছে দেখতে পাচ্ছি। এবার রাস্তা থেকে বাঁ দিকের মাঠে ট্র্যাক্টর নিয়ে নামতে হবে। তবে শ্যামল দাদা'র জমি রাস্তার ধারেই। বেশি ভেতরে যেতে হবে না। কেবল থ্রেশার মেশিনটা ভালো ভাবে দাঁড় করাতে হবে। তবে এই ব্যাপারে কিশোর বেশ সিদ্ধহস্ত। ওর কোনও অসুবিধা হবে না।

... থ্রেশার মেশিন গর্জন করতে শুরু করেছে। এখানে কাজ শুরু হল। অবশ্য কাজ বলতে সেই একই রকম ভাবে একটানা ভীষণ আওয়াজ আর প্রচুর ধুলো। তবে মুসুরির তুলনায় সর্ষে ঝাড়লে ধুলো একটু কম হয়। এদিকের মাঠের বেশিরভাগ অংশে শীতকালীন ফসল, সর্ষে বা রাই লাগানো ছিল, যার প্রায় পুরো ফসল চাষিরা কেটে হলার করে বাড়ি নিয়ে চলে গেছে। সেই কারণে চারিদিক কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কিছু কিছু মাঠে ধনে থাকলেও বেশিরভাগটাই ফাঁকা। কিছু জমিতে তো দেখছি আবার নতুন করে চাষ দেওয়াও শুরু হয়ে গেছে। নতুন করে চাষ দিয়ে এই জমিতে তারা হয় তিল বুনবে নতুবা পাট। বিল মাঠ কাছাকাছি হওয়ার জন্য এই অঞ্চলে প্রচুর পাটের চাষ হয়। আসলে বর্ষায় বিল মাঠ জলে ভর্তি হয়ে গেলে, সেই জলে পাট পচাতে খুব সুবিধা হয়। এই জন্যই এই অঞ্চলে বেশ ভালো কোয়ালিটির পাটের ফাইবার পাওয়া যায়।

... যাইহোক চলুন এবারে ট্র্যাক্টরের কাছে যাওয়া যাক।  আজ এখানে কেবল তিনজন কাজ করছে। কিশোর আর শ্যামল'দা ছাড়া আর মাত্র একজন। চারজন থাকলে কাজ একটু তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়। শ্যামল দা একাই সর্ষের দানা গুলো বস্তায় ভর্তি করছে আর কিশোর সহ বাকি জন রাইএর বোঝা গুলো মেশিনে দিতে ব্যস্ত। আর কেউ নেই। আজ মনে হয় কাজ শেষ হতে একটু বেশি সময় লাগবে। যদি দুজন মিলে সর্ষে গাছের বোঝাগুলো মেশিনে ঠেলে দেওয়া যেত, তাহলে কাজ একটু হলেও দ্রুত শেষ হতো। তবে শ্যামল দাদা'র এই জমি রাস্তার ধারে হওয়ায় একটা সুবিধা আছে। ফসল ঝাড়ার পর সর্ষের বস্তা গুলো বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও টোটো বা মোটর ভ্যানের সাহায্য নিলে খুব তাড়াতাড়ি এবং খুব সহজেই ফসল খামার থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া সম্ভব। মুনিষ দিয়ে মাথায় করে ফসলের বস্তা বাড়ি অবধি নিয়ে যাওয়ার দরকার পরে না।  সেক্ষেত্রে লোক অনেক কম লাগে। আমার মনে হয়, শ্যামল'দা সেই কারণেই এখানে লোক কম নিয়েছেন। 

... এদিকে বাকি মাঠও আজ ফাঁকা, প্রায় জনশূন্য। চারিদিকে কেউ কোথাও নেই। এমনকি আশেপাশের কোনও জমিতেও কেউ কাজ করছে না। হাতে গোনা কয়েকজন সাইকেল আরোহী ছাড়া রাস্তাও আজ প্রায় জনশূন্য। কোনও টোটো বা বাইকও দেখতে পাচ্ছি না। এমনিতেই গ্রাম থেকে এই মাঠের দূরত্ব অনেকটা। প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটারের মতো। দরকার না পরলে হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের কেউ এদিকটা খুব একটা আসে না। তার উপর আজ আবার সরস্বতী পুজো। সেকারনেই মনে হয় মাঠে আজ কেউ নেই। চারিদিক কেমন যেন একটা ছুটির মেজাজে রয়েছে।

... কাজ শেষের পথে। সব সর্ষে হলার করা হয়ে গেছে। কেবল যে কটা ফল গাছ থেকে ঝোড়ে গিয়েছিল, সেই কটা মেশিনে চেলে নিলেই হবে। কিশোর মেশিনের গতি কমিয়ে দিল। তবে মনে হচ্ছে শ্যামল'দা বড় গামলাটা আনতে ভুলে গিয়েছেন। সেই কারণে কাজে একটু অসুবিধা হচ্ছে। 

... আজকের মত সব কাজ শেষ। এবার ফেরার পালা। কিশোর ওর ট্র্যাক্টর নিয়ে বাড়ি ফিরে চলেছে। সঙ্গে আমিও ফিরছি। বাড়ি ফিরে আগে স্নান করতে হবে। তারপর ঠাকুর তলায়। এতক্ষণে হয়তো পুজোর সব আয়োজন সম্পূর্ণ। ... ... ...  আর বেশি কথা করবো না। বরং চলুন, সবুজ মাঠের বুক চিরে এই যে রাস্তা গ্রাম পর্যন্ত চলে  গিয়েছে, তার দুই ধারের সৌন্দর্য উপভোগ করি। 

... অবশেষে আমরা গ্রামে পৌঁছে গিয়েছি। কাজ শেষ করতে খুব একটা বেশি সময় লাগেনি। এখন সবে দুপুর বারোটা। তাড়াতাড়ি স্নান করে ফ্রেশ হতে হবে। আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশাকরি পরের পর্বে আবার দেখা হবে। ততদিন সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আনন্দে থাকবেন। আর যদি আজকের এই পর্ব আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই LIKE এবং COMMENT করবেন, এবং আমার CHANNEL টি SUBSCRIBE করবেন। বাই ... ...। 

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০২০ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 020]
১লা চৈত্র, ১৪২৯; (16th March, 2023), বৃহস্পতিবার।


... নমস্কার বন্ধুরা। কামদেবপুরে আপনাদেরকে আরও একবার স্বাগত জানাচ্ছি। আমি প্রবীর, দা লেজি ভ্লগার। আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকের বিকেলটা বেশ ভালো লাগছে। একেবারেই অন্যরকম। মাঘের শেষ দিকে অল্প কুয়াশা থাকলেও আজ ফাগুনের তৃতীয় বিকেলে, কুয়াশা খুব একটা ছিল না। সেজন্যই খুব সুন্দর লাগছে চারপাশ টা। অন্য দিনের তুলনায়, আজ সবুজ মাঠ যেন আরও বেশি সবুজ, আরও বেশি রঙিন। পশ্চিম আকাশে মিলিয়ে যাওয়ার আগে, সূর্য আজ যেন একটু বেশি উজ্জ্বল। তার সোনালি আলোয় চারপাশ যেন জ্বলজ্বল করছে। এই পরিবেশে কার না হাঁটতে ভালো লাগে বলুন ! তাই আমিও বেড়িয়ে পরেছি।

... এখন আমি রয়েছি বাঁধের উপরে। কামদেবপুর গ্রাম থেকে বের হয়ে কাঁড়ালিয়া যাওয়ার পথে ডান দিকে এই যে সিমেন্ট বাঁধানো রাস্তাটা রয়েছে, এটি আসলে একটা বাঁধ। শুনেছি, আগে এখান দিয়েই গঙ্গা নদী প্রবাহিত হতো। পরে সময়ের সাথে সাথে গঙ্গা নিজের গতিপথ আপন খেয়ালে পরিবর্তন করে এখান থেকে সরে যায়। এখন গঙ্গা এখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে মাটিয়ারী'র পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে। এই বাঁধের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মাটিয়ারী অবধি চলে যাওয়া যায়। খুব বেশি দূর নয়, বড়জোর তিরিশ মিনিট সময় লাগে। তবে গঙ্গা সরে চলে গেলেও পরবর্তীতে এই নিচু জমিগুলো বিল'এ পরিনত হয়। আশেপাশের সকলের কাছে এটি "কামদেবপুরের বিল মাঠ" নামে পরিচিত। প্রতি বছর বর্ষার সময় গঙ্গার জল বাড়লেই এই বিল মাঠ জলে ডুবে যায়। কোনও কোনও বছর তো আবার বৃষ্টি বেশি হলে, এই বিল মাঠ সম্পূর্ণ ডুবে গিয়ে, জল প্রায় বাঁধ পর্যন্ত উঠে আসে।

... সূর্য, পশ্চিম দিগন্তে আরও হেলে পড়েছে। দিনের আলো আস্তে আস্তে কমে আসছে। বিকেলের এই সময়ে, বাঁধের উপর থেকে সূর্যের অস্ত যাওয়া দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। কামদেবপুরে থাকলে, প্রতিদিন না হলেও যেদিনই সময় পাই, আমি এই বাঁধের উপর হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি। রাস্তাটি বেশ নির্জন। মাঝে মাঝে কয়েকটি মোটর সাইকেল আর টোটো ছাড়া, কোনও গাড়ি-ঘোড়া এদিকে খুব একটা আসে না। তাই নিশ্চিন্ত মনে এই বাঁধের উপর দিয়ে হাঁটা যায়। নির্মল বাতাস, চেনা অচেনা পাখির দল, বিল মাঠে চড়তে আসা গৃহস্থের ছাগল অথবা গরুর পাল, এবং অবশ্যই সোনালী সূর্য, এদের কে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে বেশ লাগে। যাইহোক অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি। চলুন এবার একটু বসা যাক।

... টোটো চালক ভাই, আমাকে এই ভাবে বসে থাকতে দেখে প্রথমে একটু আশ্চর্য হয়েছিলেন, পরে যখন বুঝতে পারলেন যে আমি আমার অ্যাকশান ক্যামেরাটি দিয়ে অস্তগামী সূর্যের ছবি তুলছি, তখন তিনি যেন আকাশ থেকে পরলেন। তাঁর কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না, যে কেন আমি বোকার মতো সূর্যের ছবি তুলছি।

... যাইহোক, যেটা বলছিলাম, এই নির্জন বাঁধের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে আমার সবসময়ই খুব ভালো লাগে। আবার যখন হাঁটতে হাঁটতে পরিশ্রান্ত হয়ে যাই, তখন মাঝে মাঝে বাঁধের ধারে ঘাসের উপর বসেও পরি। প্রকৃতির কোলে চুপচাপ বসে বসে পশ্চিম আকাশে সূর্যের অস্ত যাওয়া দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে। স্থানীয় মানুষজন অবশ্য, এইরকম অলস ভাবে বসে থাকা একটু অন্যচোখে দেখলেও, আমরা যারা শহুরে নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত তাদের কাছে এটা যেন স্বর্গ।

... হারাধন দাদা ... টোটোয় চড়ে মাটিয়ারী যাচ্ছেন। সঙ্গে দাদা'র মেয়ে পূজা আর নাতনি। পূজা'র শ্বশুর বাড়ি মাটিয়ারী'র বকুলতলা পাড়ায়। আজ পূজা শ্বশুর বাড়ি চলে যাচ্ছে। হারাধন দাদা মেয়েকে সেখানেই পৌঁছে দিয়ে আসতে যাচ্ছেন। উনি ভেবেছিলেন, আমি হয়তো হাঁটতে হাঁটতে মাটিয়ারী চলেছি। সেক্ষেত্রে উনি আমায় টোটো করে মাটিয়ারী বাজার অবধি লিফট দিতে পারতেন। সেকারণেই আমি কোথায় যাবো, তা উনি জানতে চাইলেন। যাইহোক, পায়ে পায়ে অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি। দিনের আলো আস্তে আস্তে কমে আসছে। চারিদিকের সোনালী আলো শুষে নিয়ে সূর্য আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পশ্চিম আকাশে ডুব দেবে। ইভনিং ওয়াক সেরে সকলেই বাড়ি ফিরছেন। আমাকেও এবার ফিরতি পথ ধরতে হবে। না হলে গ্রামে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।

... মাটিয়ারী থেকে যারা বিকেল বেলা হাঁটতে আসেন, তারা সকলে ফিরে যাচ্ছেন। আমিও সেইসাথে ফেরার পথ ধরলাম। তবে আমাকে ফিরতে হবে উল্টো দিকে। খেয়াল করে দেখুন, এখন আমার বাঁ দিকে নয়ানজুলি দেখতে পাবেন। আমরা যারা নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত, তাদের অনেকের কাছেই "নয়ানজুলি" শব্দটি একেবারে নতুন। নদী পার্শ্ববর্তী নিচু অঞ্চলে, বিশেষ করে বিল মাঠের মাঝে যখন রাস্তা তৈরি করা হয়, তখন রাস্তার ধার বরাবর লম্বা খাল কেটে সেই খালের মাটি দিয়েই রাস্তা তৈরি করা হয়। এই খাল কে বলা হয় নয়ানজুলি। ...... এই দেখুন, ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকতে শুরু করেছে। সূর্য ডুবে গিয়ে যত অন্ধকার নামবে, তত এদের ডাক বাড়তে থাকবে। যাইহোক যা বলছিলাম ... রাস্তার ধারে নয়ানজুলি করা থাকলে দুটো সুবিধা আছে। প্রথমত খাল কেটে পাওয়া প্রচুর মাটি, রাস্তার উপর ফেলে রাস্তা উঁচু করা হয়, যাতে বর্ষার সময় সহজে ডুবে না যায়। দ্বিতীয়ত বর্ষার সময় যখন গঙ্গার জল বাড়ে, তখন এই খাল গুলো বেশ কিছু পরিমান জল ধরে রাখতে পারে। ফলে গঙ্গার জলের একটা নির্দিষ্ট পরিমান বৃদ্ধি পর্যন্ত বিল মাঠের জমির ফসল গুলো বাঁচানো সম্ভব হয়। আবার এই অঞ্চলে প্রচুর পাটের চাষ হয়। সেই পাট পচাতে প্রচুর জল লাগে। তখনও ভরসা এই নয়ানজুলি গুলো। এই মাঠের প্রায় সব পাট এই নয়ানজুলি'তেই জাগ দেওয়া হয়। 

... ... এই দেখুন কথা বলতে বলতে গ্রামের কাছাকাছি চলে এসেছি। এই তো সেই "জোড়া তালতলা"। কামদেবপুর গ্রামের শেষ মাথা। গ্রামের সকলে এই স্থানটি "বাঁধের ধার" বলে। সামনে ডান দিকে যে রাস্তা টা দেখা যাচ্ছে, অর্থাৎ মোটরসাইকেল টা যে রাস্তা দিয়ে এলো, সেটাই বাঁধের রাস্তা। আমি এতক্ষণ এই রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হাঁটতে এলাম। চলুন, এবার গ্রামে ঢোকা যাক। অবশ্য গ্রাম এখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে। প্রায় আধ কিলোমিটার হবে। সামনেই সেই ঘন বাঁশবন, যেখানে ভর দুপুরেও সূর্যের আলো ঢোকে না। তবে একটা আওয়াজ আশাকরি আপনারা শুনতে পাচ্ছেন। একঝাঁক পাখির কিচিরমিচির। কেবল এই আওয়াজের জন্যই এই জায়গাটি আমার এত ভালোলাগে। 

... তবে একটা কথা আপনাদের আগে বলা হয়নি। যে কারণে গ্রামে ফেরার সময় আমি তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে এলাম, সেটা এখন বলবো। বাঁধে হাঁটতে যাওয়ার সময় আমি দেখতে পেয়েছিলাম, গ্রামের অনেকেই তাদের নিজেদের গরু আর ছাগলের দল মাঠে চড়াতে নিয়ে এসেছেন। বছরের বেশির ভাগ সময়, গরু ছাগলের দল বাড়িতে গোয়ালে বা খোঁয়াড়ে বাঁধা থাকে। তবে রবি শস্য উঠে যাওয়ার পর মাঠ কিছুদিন ফাঁকা থাকে বলে, এই সময় গ্রামের অনেকে নিজেদের গরু ছাগল গুলো ফাঁকা মাঠে নিয়ে এসে ছেড়ে দেন। গরু ছাগল গুলো এতে বেশ মজা পায়, মনের আনন্দে সারা মাঠ ঘুরে ঘুরে ঘাস খেয়ে বেড়ায়। এখন শেষ বিকেলে সেই গরু ছাগলের দল বাড়ি ফিরছে। আমিও এদের সাথে বাড়ি ফিরবো। আর বেশি কথা বলবো না ......... বরং এক মনে এদের সাথে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরা বেশি আনন্দের। আমার স্থির বিশ্বাস আপনারাও ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করবেন ... ...

... অবশেষে আমরা গ্রামে পৌঁছে গিয়েছি। পশ্চিম আকাশে সূর্যের লাল রঙের শেষ আভা'ও মিলিয়ে গেছে। আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশাকরি পরের পর্বে আবার দেখা হবে। ততদিন সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আনন্দে থাকবেন। আর যদি আজকের এই পর্ব আপনার ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই LIKE এবং COMMENT করবেন, এবং আমার CHANNEL টি SUBSCRIBE করবেন। বাই ... ...

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


|| Page 01 |Page 02 |Page 03 || Page 04 || Page 05 || Page 06 || Page 07 ||