The Lazy Vlogger 03

 

      আমার ইউটিউব ভ্লগ [My Youtube Vlog] : 03

Prabir Kumar Das | The Lazy Vlogger

|| Page 01 |Page 02 |Page 03 || Page 04 || Page 05 || Page 06 || Page 07 ||



কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০১১ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 011]
২৪শে আশ্বিন, ১৪২৯; (11th October, 2022), মঙ্গলবার।


... সুপ্রভাত বন্ধুরা। এখন সকাল প্রায় সাড়ে আটটা। আমি আর ওম বেড়িয়ে পরেছি, যেতে হবে অনেকটা পথ, যাব সেই কলের ধারে। আজ সেখানে সাজো সাজো রব। 

... আমাদের বরং আজ একটু দেরি হয়ে গেল। ওম অবশ্য অনেক আগেই রেডি হয়ে বাঁশ বাগানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি আজ ঘুম থেকেই দেরি করে উঠেছি। তারপর প্রাত্যহিক সব কাজ শেষ করে, ব্রেকফাস্ট করতে করতেই সাড়ে আটটা বেজে গেল। যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে সেখানে পৌঁছতে হবে। ওম কে অবশ্য  যদি বলি, ও তো এক দৌড়ে দশ মিনিটে সেখানে পৌঁছে যাবে। আমিই বরং ওর সাথে দৌড়ে  পারবো না। এমন কি ওর মতো আলপথ ধরে জোরে হাঁটতেও পারবো না। 

... যখন কোথাও যাওয়ার তাড়া থাকে, তখন প্রতিদিনের চেনা পথও কেমন যেন অচেনা হয়ে যায়। এই যেমন আজই দেখুন, প্রতিদিনের চেনা এই বাঁশবন আর আমবাগান'টা মনে হচ্ছে ভীষণ লম্বা পথ, যেন শেষই হতে চাইছে না। অথচ, যেদিন কোনও তাড়া থাকে না, সেদিন আমি এই বনের ভিতরেই বিভিন্ন চেনা-অচেনা পাখির ডাক শুনে তাদের ছবি তুলবো বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করি। তখন মনে হয় বাগানটা আর একটু বড় হলে ভালো হতো। অথচ, আজ ভীষণই বিরক্ত লাগছে ... ...

... আকাশে রোদের তেজ একটু বাড়লেও এখনো বেশ কুয়াশা রয়েছে। দূরের মাঠ এখনো ঠিক মতো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও এখন শীতের শেষ। দুপুরের দিকে গরম একটু বাড়লেও রাতের দিকে বেশ ঠাণ্ডা পড়ে, বিশেষ করে ভোর রাতের দিকে তাপমাত্রা বেশ নেমে যায়। রাতে শিশির পরে বলে এই সময় মাঠের আলপথ গুলোও বেশ ভিজে থাকে। সকাল সকাল, এই ভিজে আলপথ ধরে হাঁটতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়, যে কোনও সময় পিছলে পরে যাওয়ার সম্ভবনা। তাই খুব সাবধানে হাঁটতে হচ্ছে। ওম'এর এই পথে তেমন কোনও অসুবিধা হয় না। ওর বেশ অভ্যাস আছে। তাই মাঝে মাঝেই ওকে মাঝ পথে দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে, ফলে কলের ধারে পৌঁছতে আরও দেরি হয়ে যাচ্ছে। 

... রতন কাকা, সম্পর্কে ওম এর "রতন দাদু" ... বুড়ো কাকা দের কাঁঠাল তলার মাচালে বসে আছেন। সকাল সকাল উনিও বেড়িয়ে পরেছেন, মাঠের কাজে। ওম কেন এত সকালে মাঠে যাচ্ছে, সেই কথা শুনে ওকে রাগাচ্ছিলেন। ওম অবশ্য আজকাল এসব শুনে রাগে না, বরং মুখে মুখে উত্তর দেয়, আজও সেই রকম ভাবে উত্তর দিল।

... ধানের জমির আলে নতুন নতুন জল পেয়ে প্রচুর "পল ছাতা" হয়েছে। এখানে সকলে "ব্যাঙের ছাতা" কে "পল ছাতা" বলে। পল অর্থাৎ ধানের খড়, যা প্রধানত গোরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই পল বা খড়ের গাদায় ব্যাঙের ছাতা বেশি জন্মায় বলে সকলে একে পল ছাতাও বলে। এখন, আলের ধারে পল ছাতা দেখে ওম'এর লক্ষ্য সেদিকেই ঘুরে গেছে। যে কিছুক্ষণ আগেই আমাকে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য তাড়া লাগাছিল, সে এখন পল ছাতা নিয়ে ব্যস্ত। বাধ্য হয়েই আমাকে তাড়া লাগাতে হল। 

... ওম আমার জন্য মুসুরি'র ফল আনতে দৌড়ল। মুসুরি এখন সবে ধরেছে। ফল এখনো কাঁচা, সবুজ। এই কাঁচা মুসুরি'র ফল খেতে বেশ মিষ্টি। কাঁচা মুসুরি, মুড়ি দিয়ে খেতেও খুব ভালো লাগে। আবার আলু, বিউলি'র বড়ি  আর কাঁচা মুসুরি'র ফল দিয়ে তৈরি তরকারীও খেতে খুব ভালো। যাই হোক, ওম মুসুরি আনতে চলে গেল। ও না ফেরা অবধি অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। বরং চলুন, সেই ফাঁকে আমরা আর একবার ধনের ফুলে মৌমাছি'দের আনাগোনা দেখে নি। 

... এমনিতেই আমি আলপথ ধরে খুব তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারি না, তার উপর ওম'এর সাথে গল্প করতে করতে আসছিলাম। তাই আমাদের কলের ধারে পৌঁছতে বেশ দেরি হয়ে গেল। সকলে অনেক আগেই মাঠে পৌঁছে গিয়েছে। মাটিতে জাল পেতে তার উপর রাই জড়ো করে সকলে প্রস্তুত। এমন কি হুলার মেশিন টেনে নিয়ে ট্রাক্টর ও পৌঁছে গেছে। ঐতো শুরু হয়ে গেল যন্ত্র দানবের গর্জন। শুরু হল আজকের কর্মযজ্ঞ। চলুন, এগিয়ে গিয়ে বরং দেখা যাক।

... আপনাদের বলেছিলাম, যে আজ কলের ধারের মাঠে সাজো সাজো রব। কিন্তু কেন সাজো সাজো রব, তা তো আগে জানানো হয় নি,  তবে মনে হয়, এতক্ষণে সেটা আপনারা আন্দাজ করতে পেরেছেন। আসলে এতদিন ধরে মাঠে যে রাই গুলো শুকনো করার জন্য গাদা দেওয়া ছিল, সেগুলো আজ ঝেড়ে ঘরে তোলার পালা। তবে অনেকটা জমি, রাই'এর পরিমান ও অনেক। সেইজন্যই পাটায় না ঝেড়ে হুলার মেসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাটায় রাই ঝাড়তে অনেক সময় লাগে। রাই ঠিক মতো শুকনো না হলে অনেক সময় ঝোড়তে চায় না। আবার ঝাড়ার পর, সেই রাই ঠিক মতো চেলে পরিষ্কার করতেও বেশ সময় লাগে। সেই তুলনায় হুলার মেশিনের সুবিধা অনেক। তাড়াতাড়ি রাই ঝেড়ে, চেলে পরিষ্কার করে একেবারে বস্তা ভর্তি করে নেয়া যায়। তাই আগে সকলে পাটাতে রাই ঝাড়লেও, হুলার মেশিন আসার পর থেকে সকলেই ধান, গম বা সরষে ঝাড়ার জন্য হুলার মেশিনই ব্যবহার করে। এতে সময় এবং খাটুনি অনেকটাই বাঁচে।

... আজ মাঠে অনেকেই আছে দেখছি। ট্র্যাক্টর আর হুলার মেশিন টা সৃষ্টি'র। ও নিজেই ট্র্যাক্টর এর সাথে হুলার মেশিনটা টেনে মাঠে নিয়ে এসেছে। মেশিন ও নিজেই অপারেট করে। এছাড়াও দেখছি হারাই দাদা রয়েছেন। রয়েছেন রফিক ভাই, কাজাই ভাই। আরও একজন রয়েছেন আমাদের সঙ্গী হিসেবে। তিনি আমার অচেনা, তাই তার নাম জানাতে পারলাম না। কাজাই ভাই রয়েছেন সৃষ্টি'র সাথে। জড়ো করা রাইগুলো তিনি হাতে হাতে সৃষ্টি'কে এগিয়ে দিচ্ছেন। সৃষ্টি সেগুলো মেশিনে ঠেলে দিচ্ছে। আর ঝাড়াই বাছাই'এর পর মেশিন থেকে যে সরষে গুলো বেরিয়ে আসছে, সেগুলো রফিক ভাই বস্তায় জড়ো করছে। আপাত দৃষ্টিতে দেখে খুব সহজ মনে হলেও, বেশ পরিশ্রমের কাজ। বিশেষ করে যন্ত্রদানবের এই বিশাল গর্জন আর সাথে বীভৎস ধুলো, তারই মাঝে এই ভাবে কাজ করা, বেশ কঠিন। 

... প্রথম ধাপের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। বেশ কিছুটা রাই ঝাড়া হয়ে গেল। দু'বস্তা রাই মাথায় করে বয়ে নিয়ে হারাই দাদা'রা বাড়িতে রেখে আসতে গেলেন। বস্তা গুলোর ওজন কিন্তু খুব একটা কম নয়। প্রায় পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন কেজি।  এরকম ভাবে পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন কেজির বস্তা মাথায় করে বয়ে নিয়ে এসে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া, কাজটা কিন্তু খুব সহজ নয়। আমরা যারা শহুরে মানুষ, এসব কল্পনাই করতে পারি না। 

... যাই হোক, হারাই দাদারা এতক্ষণে বাড়ি পৌঁছে গেছেন। সরষে গুলো আবার উঠোনে বা ছাদে মেলে দিয়ে রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। ভালো করে শুকনো করে না নিলে পরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এদিকে মাঠের কাজ এখনো অনেক বাকি। পুরোটা একটা ভিডিও তে দেখাতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই আজ এখানেই শেষ করছি। বাকি টা আবার পরের পর্বে। সকলে ভালো থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। পরের পর্বে আবারও দেখা হবে। 

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০১২ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 012]
১৪ই অগ্রহায়ণ,  ১৪২৯; (1st December, 2022), বৃহস্পতিবার।


... সুপ্রভাত বন্ধুরা। আশাকরি সকলে ভালো আছেন। আমি প্রবীর, দা লেজি ভ্লগার। শুরু করছি আরও একটা নতুন পর্ব। 

... আপনারা যারা আমার আগের ভ্লগ টি দেখেছেন, তারা হয়তো এতক্ষণে বুঝতে পেরে গেছেন, যে আমি কোথা থেকে আজকের ভ্লগ শুরু করছি।  হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, আগের ভ্লগ যেখানে শেষ করেছিলাম, আজ সেখান থেকেই শুরু করবো। বলতে পারেন আজকের এই ভ্লগটি আমার আগের ভ্লগের continuation। 

... আর যারা আমার আগের ভ্লগটি এখনো সময় করে দেখে উঠতে পারেননি, তাদের কে জানাই, আমি এই মুহূর্তে রয়েছি কামদেবপুরের ডাঙা মাঠে। সেখানে আজ সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। শুরু হয়েছে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেই কর্মযজ্ঞে সামিল হওয়ার জন্যই আমি আর ওম সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরেছিলাম, ডাঙা মাঠের উদ্দ্যেশে। 

... যারা আমার আগের ভ্লগটি দেখেছেন, তারা জানেন কেন আজ ডাঙা মাঠে সাজো সাজো রব। আর যারা এই ভ্লগটা প্রথমে দেখছেন, তাদের আজকের এই কর্মযজ্ঞের ব্যাপারে একটু জানিয়ে রাখি। আপনারা যে যন্ত্রদানবটির বিশাল গর্জন শুনতে পাচ্ছেন, সেটি হল "হুলার মেশিন"। প্রধানত ধান, গম বা সরষে ইত্যাদি ঝাড়ার জন্য এই মেশিন ব্যবহার করা হয়। আজ এই মেশিনে রাই ঝাড়া হচ্ছে। আসলে এতদিন ধরে যে রাইগুলো শুকনো করার জন্য মাঠে  গাদা দেওয়া ছিল, সেগুলো আজ ঝেড়ে পরিষ্কার করে ঘরে তোলার কাজ চলছে। ফসল যদি অল্প হয়, তাহলে পাটায় ঝেড়ে নেয়া যায়। পাটায় কিভাবে রাই ঝাড়া হয়, সেব্যাপারে আমি আগে কয়েকটি ভ্লগ করেছিলাম। কানা পুকুরের ধারে করা সেই ভ্লগ গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন, সেই কাজ কত পরিশ্রমের ছিল। কিন্তু আজ রাই'এর পরিমাণ অনেক। সেইজন্যই পাটায় না ঝেড়ে হুলার মেসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাটায় রাই ঝাড়তে অনেক সময় লাগে। রাই ঠিক মতো শুকনো না হলে অনেক সময় ঝোড়তে চায় না। আবার ঝাড়ার পর, সেই রাই ঠিক মতো চেলে পরিষ্কার করতেও বেশ সময় লাগে। সেই তুলনায় হুলার মেশিনের সুবিধা অনেক। তাড়াতাড়ি রাই ঝেড়ে, চেলে পরিষ্কার করে একেবারে বস্তা ভর্তি করে নেয়া যায়। সেইকারনে আগে সকলে পাটাতে রাই ঝাড়লেও, হুলার মেশিন আসার পর থেকে সকলেই ধান, গম বা সরষে ঝাড়ার জন্য মেশিনই ব্যবহার করে। এতে সময় এবং খাটুনি অনেকটাই বাঁচে। কেবল একটাই অসুবিধা। যন্ত্র দানবের বিশাল গর্জন আর সাথে বীভৎস ধুলো।

... হুলার মেশিন'টা ট্র্যাক্টর এর সাথে লাগানো। মেশিনের নিজের কোনও ইঞ্জিন থাকে না। ট্র্যাক্টর'এর ইঞ্জিনের সাহায্যেই হুলার মেশিন কে অপারেট হয়। এই কাজটা নিখুঁত ভাবে করে যাচ্ছে "কিশোর"। আর ঝাড়াই বাছাই'এর পর মেশিন থেকে যে সরষে গুলো বেরিয়ে আসছে, সেগুলো রফিক ভাই বস্তায় জড়ো করছে। একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ,বেশ পরিশ্রমেরও বটে, একটুও ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই। আমার তো মেশিনের বিশাল আওয়াজ আর বীভৎস ধুলোয় এরই মধ্যে মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেছে। কেবল ভাবছি এতটা বৈরি পরিবেশ মানিয়ে নিয়ে, কিশোর বা রফিক ভাইরা কিভাবে কাজ করছে! রফিক তো কেবল বস্তা হাতে সরষে ভর্তি করছে না, একই সাথে মাঝে মাঝে আবার কিশোরদেরও এসে সাহায্য করছে। আসলে হুলার মেশিনটি এত দ্রুত চলে যে, একজনের পক্ষে রাই'এর বোঝা গুলো মেশিনের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কাজের গতি মাঝে মাঝে কমে যাচ্ছে। তখনই রফিক এসে কিশোরদের সাথে যোগ দিচ্ছে। হারাই দাদা বা কাজাই ভাই রা সাথে থাকলে অবশ্য এই অসুবিধা হতো না, কিন্তু তারা তো সমানেই রাই'এর বস্তা গুলো মাথায় করে বয়ে নিয়ে বাড়িতে রেখে আসতে যাচ্ছে। তাই মাঝে মাঝে কাজে একটু অসুবিধা হয়ে যাচ্ছে। 

... প্রথম ধাপের কাজ এখনো অনেক বাকি। এখনো মাঠে অনেক রাই জড়ো  হয়ে রয়েছে। এখন কাজের গতি একটু কম। যখন রফিক ভাইরা দুজনে মিলে রাই'এর বোঝা গুলো কিশোরকে এগিয়ে দিচ্ছে, তখন কাজের গতি একটু বাড়লেও, এখন আবার গতি কমে গিয়েছে। 

... ওম দেখছি এখনো কাঁচা মুসুরির ফল নিয়ে ব্যস্ত। সকালে মাঠে আসার সময় ও জমি থেকে কাঁচা মুসুরি গুলো তুলে নিয়ে এসেছিল। নিজের জন্য যেগুলো এনেছিল, সেগুলো সব শেষ। আমার জন্য যেগুলো নিয়ে এসেছিল, এখন  সেগুলোই খেয়ে চলেছে। আমিও অবশ্য দু-চারটে খেয়েছি। তবে খুব বেশি খেতে ভালো লাগে না।

... ঐ তো হারাই দাদা'রা ফিরে চলে এসেছে। এইবার আবার কাজের গতি একটু বাড়বে। আসলে মেশিনের সাথে তাল মিলিয়ে যত তাড়াতাড়ি রাই'এর বোঝা এগিয়ে দেওয়া যাবে, তত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করা যাবে। 

... এখন ঘড়িতে প্রায় দশটা বাজে। কাজ এখন বেশ ভালো ভাবেই এগোচ্ছে। কাজাই ভাই সরষের বস্তা মাথায় নিয়ে বাড়ি যাওয়ার আগে রাই'এর বেশ কিছু বোঝা কিশোরদের হাতের কাছে এগিয়ে দিয়ে গেছে। এখন আবার রফিক ভাইও ওদের সাথে যোগ দিয়েছে। ফলে কাজের গতি এখন বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়, ততই মঙ্গল। এই কাজ শেষ করে হুলার মেশিন সহ ট্র্যাক্টর আবার আরও এক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। সেই কলের ধারে। সেখানেও প্রায় এতগুলো রাই জড়ো করা আছে। সেই কাজও আজ শেষ করতে হবে। 

... রবিশস্য বা শীতকালীন ফসলের একটা বড় সমস্যা হল "ফসলের নাড়া" বা ফসলের অবশেষ। গ্রীষ্মকালীন ধান বা বর্ষাকালীন ফসল পাট নিয়ে এই সমস্যা খুব একটা হয় না। ধানের নাড়া বা "খড়" আমাদের দেশে গোখাদ্য হিসাবে বহুল ব্যবহৃত। আর পাটের নাড়া হিসাবে যা থাকে অর্থাৎ পাটকাঠি বা প্যাকাঠি তা এখনো জ্বালানি হিসাবে প্রায় সারাবছর গ্রামীণ বাংলায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বেড়া দেওয়ার কাজেও পাটকাঠির প্রচুর ব্যবহার। কিন্তু শীতকালীন ফসল যেমন গম, সরষে, ধনে বা তিল এইসব ফসলের নাড়া জ্বালানি হিসাবেও ব্যবহার করা যায় না, আবার গোখাদ্য হিসাবেও এর ব্যবহার নেই। সেইকারন এই সব নাড়া চাষিদের কাছে সবসময়ই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো এই নাড়া পচিয়ে জৈব সার হিসাবে জমিতে ব্যবহার করা যেত, কিন্তু সেক্ষেত্রে সবচেয়ে অসুবিধা হয়ে যা দাঁড়ায় তা হল জৈব সার পচানোর উপযুক্ত স্থান বা "সারগর্ত"। সেকারণে বেশীর ভাগ সময়ই চাষিরা ফসল নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার পর মাঠেই এই নাড়া আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ফলে ভীষণ ভাবে পরিবেশ দূষিত হয়। আজও এর কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় নি।

... যাইহোক সমস্যা সবসময় থাকবেই আবার সেই সমস্যা সঙ্গে নিয়ে কাজও করে যেতে হবে। ইতিমধ্যে হারাই দাদা'রা আরও দুইবস্তা সরষে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে চলে এলো। এদিকে প্রথম ধাপের কাজ প্রায় শেষ। যেটুকু বাকি রয়েছে তা শেষ করতে আর মনে হয় খুব বেশি সময় লাগবে না। সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট লাগবে তার বেশি নয়। তারপর আবার মেশিন অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেখানও প্রচুর রাই জড়ো করা রয়েছে।

... আরও দু'বস্তা সরষে মাথায় করে বয়ে নিয়ে হারাই দাদা'রা বাড়িতে রেখে আসতে গেলেন। এই ভাবে সকাল থেকে প্রায় চার বার হল। বস্তা গুলোর ওজন কিন্তু খুব একটা কম নয়। প্রায় পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন কেজি।  এরকম ভাবে পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন কেজির বস্তা মাথায় করে বয়ে নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া, কাজটা কিন্তু খুব সহজ নয়। আমাদের মত শহুরে মানুষ'রা, এসব তো কল্পনাই করতে পারি না। অথচ এঁদের দেখুন, সকাল থেকে প্রায় চার বার যাওয়া-আসা হল, আরও কত বার যেতে হবে কে জানে !! 

... সরষে ঝাড়া প্রায় হয়ে এলো। কিশোর মেশিনের গতি একটু কমিয়ে দিল।  কেবল যেটুকু নাড়া বা অবশেষ পরে আছে, হুলারের গতি কমিয়ে একটু ভাল করে চেলে নিতে হবে। ব্যাস, এখানকার কাজ শেষ। মেশিন এবার এখান থেকে কলের ধারে নিয়ে যাওয়ার পালা।

... ট্র্যাক্টর সহ হুলার মেশিন টি নিয়ে অবশেষে কলের ধারে পৌঁছনো গেল। হুলার মেশিন দাঁড় করাতে একটু অসুবিধা হয়েছিল ঠিকই, তবে কিশোর ব্যাপারটা ঠিক ম্যানেজ করে নিয়েছে। ওর অবশ্য এই ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। যাইহোক এবার দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করতে হবে। এখানেও প্রচুর রাই জড়ো করা রয়েছে। বেশ সময় লাগবে। এদিকে ভ্লগটি বেশ বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবছি এই পর্ব এখানেই শেষ করবো। বাকিটা পরের পর্বে দেখানো যাবে। ততক্ষণ সকলে ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আর যদি আমার এই ভ্লগটি ভালো লাগে, তাহলে Like এবং আমার Channel টি Subscribe করবেন। বাই।

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০১৩ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 013]
২০শে অগ্রহায়ণ,  ১৪২৯; (7th December, 2022), বুধবার।


... নমস্কার বন্ধুরা। আরও একটা নতুন পর্বে, আপনাদের সকলকে স্বাগত। আমি প্রবীর, দা লেজি ভ্লগার। আজও আমি রয়েছি ডাঙা মাঠের কলের ধারে, যেখানে আমাদের নতুন অস্থায়ী খামারে, হুলার মেশিনে রাই ঝাড়ার কাজ চলছে। আজকের এই পর্বটিও, আমার আগের দুটির পর্বের continuation, এটি তৃতীয় বা শেষ ভাগ। তো চলুন, শুরু করা যাক আরও একটা নতুন ভ্লগ।

... আগের পর্বে আপনাদেরকে দেখিয়েছিলাম, এখানে হুলার মেশিনটা ঠিক মতো রাখতে গিয়ে কিশোরকে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিল। আসলে কলের ধারের এই জায়গায় বেশ কয়েকটি গাছ সহ একটা ঢিপি মতো রয়েছে। ঐ ঢিপির উপরেই 'কলঘর' সহ সাবমারসিবল পাম্পটা বসানো, যা থেকে এই মাঠের অনেক জমিতে জলসেচ দেওয়া হয়। এই ঢিপিটা ঠিকঠাক মতো কাটিয়ে হুলার মেশিনটি ভালোভাবে দাঁড় করাতে বেশ ঝামেলা হচ্ছিল। এক সময় তো মেশিন উলটে যাওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। কোনও রকমে রফিক ভাইয়ের চিৎকারে সেই বিপদ কাটানো সম্ভব হয়। আসলে হুলার মেশিন লাগানোর পর ট্রাক্টারের সাইজ এত বড় হয়ে যায়, যে মেশিন সহ ট্রাক্টর কন্ট্রোল করা বেশ অসুবিধাজনক হয়ে যায়। অবশ্য কিশোরের এই ব্যাপারে প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। আজও যথেষ্ট দক্ষতার সাথে ও কাজটা সম্পন্ন করলো।

... যাইহোক অবশেষে সব বাধা কাটিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হল। এখানেও প্রচুর রাই জড়ো করা রয়েছে। সব কাজ শেষ করতে বেশ সময় লাগবে। অবশ্য কাজ বলতে সেই একই রকম ভাবে যন্ত্রদানবের একটানা বিশাল গর্জন, মেশিন থেকে বের হয়ে আসা ফসলের নাড়া, সাথে প্রচুর ধুলো আর তারই সাথে একটানা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে মেশিনে রাই'এর বোঝা গুঁজে দেওয়া এবং বস্তায় সরষে ভরে নেওয়া।

... এখন অবশ্য কাজ বেশ ভাল গতিতে এগোচ্ছে। রফিক ভাই তো ইতিমধ্যেই দুইবস্তা রাই জড়ো করেও ফেলেছে। আসলে কাজ শুরুর প্রথম দিকে, যেহেতু রাই'এর বোঝা গুলো মেশিনের কাছাকাছি থাকে, তখন কাজের গতি বেশ ভালোই থাকে। এই ভাবে চললে কাজ শেষ হতে মনে হয় খুব বেশি সময় লাগবে না।

... এই হল ফসলের অবশেষ, বা স্থানীয় ভাষায় বলে "নাড়া"। সরষের নাড়া একটু বেশিই হয়। দ্বিতীয় পর্যায় এসে এখনো অর্ধেক রাই ঝাড়া হয়নি। এরই মধ্যে বেশ কয়েক বস্তা নাড়া জড়ো হয়ে গেছে। আসলে তুলনামূলক ভাবে দেখলে মুসুরি বা ধনে'র তুলনায় সরষে বা তিলের গাছ একটু বড় হয়। সেই কারনেই সরষের নাড়া'র পরিমাণ বেশ বেশি। এক বস্তা রাই ঝাড়লে প্রায় পাঁচ বস্তা নাড়া জমে যায়। যথারীতি সরষে ঝাড়ার পর এই বিপুল পরিমাণ নাড়া নিয়ে চাষিরা বেশ বিপদে পরে। জায়গার অভাবে এত নাড়া পচানো সবসময় সম্ভব হয় না। রাই'এর নাড়া আবার, একটু শক্ত। তাই পচতেও বেশ সময় লাগে। আবার সারগর্ত গুলো মাঠ থেকে একটু দূরে গ্রামের কাছাকাছি হয় বলে, মাঠ থেকে সারগর্ত পর্যন্ত নাড়া পৌঁছানোর খরচা অনেক। সেকারনেই চাষিরা সরষের সব নাড়া মাঠেই পুড়িয়ে দেয়। এতে বায়ুদূষণ হলেও যেহেতু চাষের তাৎক্ষণিক তেমন কোনও ক্ষতি হয় না, সেকারণে চাষিরা ব্যপারটা অতো গুরুত্ব দিয়ে ভাবে না। বরং তাদের কাছে সব নাড়া আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া অনেক সহজের এবং তারা এই সহজ পদ্ধতিই ব্যবহার করেন।

... আমি কয়েকজনের সাথে এব্যাপারে কথাও বলেছিলাম। তাদের একাংশের বক্তব্য, নাড়া তো তারা পূর্বপুরুষ,বাবা-ঠাকুর'দার আমল থেকে এভাবেই মাঠে পুড়িয়ে আসছেন। পুরুষানুক্রমে তারা এই ভাবেই চাষ করেন। এতে নাকি চাষের জমির কোনও ক্ষতি হয় না। অনেকে তো আবার একথাও বলেছেন যে এভাবে নাড়া মাঠে পুড়িয়ে দিলে, জমির উর্বরতা নাকি অনেক বৃদ্ধি পায়। আবার অনেকে বলেন, নাড়া পোড়ালে নাকি জমির সব পোকামাকড় এবং সাথে সব আগাছা মরে যায়, ফলে জমি পরিষ্কার হয়। অবশ্য "ছাই" কিভাবে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, সেটা আমার মাথায় ঢোকেনি। এমনকি কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, ফসল চাষের জন্য কৃষি জমির উপরিভাগের ৬ ইঞ্চি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাড়া পোড়ালে জমির ওই অংশ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে নাড়ার আগুনে মাটির ভিতরে থাকা বিভিন্ন রকমের প্রাণী, কেঁচো বা উপকারী বন্ধু পোকামাকড় গুলোও মরে যায়। আমার তো মনে হয়, এতে চাষের কোনও লাভ হয় না বরং বেশ ক্ষতি হয়, এমনকি বারবার নাড়া পোড়ালে জমির ফসল উৎপাদন ক্ষমতা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

... বর্তমানে অবশ্য আমাদের রাজ্যের কৃষি দপ্তর এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ হয়েছে এবং ফসলের নাড়া পোড়ার দূষণ ঠেকাতে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নাড়া পোড়ানোর ক্ষতি নিয়ে ব্যাপক প্রচারও করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরও তা আটকানো যাচ্ছে না। কৃষকদের কাছে নাড়া পুড়িয়ে ফসলের অংশ নষ্ট করে দেওয়া সহজতর কাজ। তবে শুনেছি জৈব পদ্ধতিতে কিভাবে এই ফসলের নাড়া খুব সহজে এবং খুব তাড়াতাড়ি চাষের জমিতেই পচিয়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায় এবং একই সাথে পরিবেশ দূষণ রোধ করা যায় সে ব্যাপারে কৃষি দপ্তরের অধীনে নানা গবেষণাও চলছে। সেরকম কিছু সহজ পদ্ধতি পাঞ্জাব, হরিয়ানা বা উত্তরপ্রদেশের কোনও কোনও অংশে প্রয়োগ করার কথা শুনতে পেলেও আমাদের এখানে অবশ্য এখনো একই ভাবে নাড়া পোড়ান চলছে। আমার তো মনে হয়, কেবল কৃষি দপ্তরের এ ব্যাপারে সজাগ হলে চলবে না, আমাদেরও এব্যাপারে সজাগ হতে হবে, এবং কিভাবে জমির উর্বরতা রক্ষা করা যায়, সে ব্যাপারে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। অবশ্যই এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত।

... সরষে চাষ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, মাঠ এখন একটু ফাঁকা। এক মাসের মতো জমি ফাঁকা রাখা থাকবে। এই এক মাস চাষিরা সর্ষে ঝেড়ে ঘরে তুলতে ব্যস্ত থাকবে। তারপরই সবাই আবার নতুন উদ্যোগে মাঠে নেমে পড়বে, কেউ ধান লাগাবে, কেউ আবার তিল। ... ... এখন অবশ্য ডাঙা মাঠের কিছু কিছু জায়গায় ধনে রয়েছে। ধনের ফুল'ও ধরে গিয়েছে। চারদিক সাদা। কাঁচা ধনের উগ্র গন্ধে বাতাস বেশ ভারী। ধনের সাদা ফুল আর উগ্র গন্ধ, সবসময়ই মনে একটু অন্যরকম মাদকতা সৃষ্টি করে।কোনও কোনও মাঠে আবার ধনের ফল'ও ধরেছে। আর কয়েক সপ্তাহ, তারপরেই ধনে তোলার কাজও শুরু হয়ে যাবে।

... ওম ... আজ সকাল থেকেই এই কর্মযজ্ঞে ও আমাদের সঙ্গী। দু-একবার অবশ্য বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য বলেছিল, তবে এক অদ্ভুত বিষয়ের টানে ও ঠিক আমাদের সাথে রয়ে গিয়েছে। আসলে ট্র্যাক্টর বা হুলার মেশিন ওর খুব পছন্দের বিষয়। সুযোগ পেলেই ট্র্যাক্টরে চড়ে বসে। ওর খুব ইচ্ছা, বড় হয়ে একটা ট্র্যাক্টর কিনবে। সঙ্গে হুলার মেশিন। তারপর সেই ট্র্যাক্টর নিয়ে সারা ভারত ঘুরে বেড়াবে। এখানেও ওকে ভালো করে দেখুন ... চালকের আসনে এমন ভাবে বসে আছে, যেন ও নিজেই ট্র্যাক্টর চালিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে। তারপর কাজ শেষ হলে চালিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে।

... ট্র্যাক্টর আর হুলার মেশিনটা অবশ্য কিশোর'এর। পুরো নাম কিশোর রক্ষিত। আজকের এই কাজে, মাথায় গামছা'র ফেটি বেঁধে মেশিনের ট্রলির উপর দাঁড়িয়ে যে ছেলেটি একনাগাড়ে রাই'এর বোঝা গুলো মেশিনে গুঁজে দিচ্ছে, ও হল কিশোর। আমি অবশ্য ওকে "সৃষ্টি" বলেই চিনি। ওর ডাক নাম। ট্র্যাক্টর এর সাথে হুলার মেশিন ও নিজেই মাঠে টেনে নিয়ে এসেছে। নিজের সমস্ত কাজে, এমনকি নিজের এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলির সব কাজেও ও নিজেই পুরো মেশিনটা অপারেট করে। আজও তার অন্যথা হল না। সকাল থেকেই একটানা নিরিবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে চলেছে। আর ওকে আজ সারাদিনের এই পুরো কাজে হারাই দাদা'রা সাহায্য করেছে। সঙ্গে অবশ্যই রফিক ভাই, কাজাই ভাই রা ছিল।

... কাজের গতি কিন্তু এখন অনেক বেড়েছে, আর কাজ এগিয়েছেও অনেকটাই। ইতিমধ্যেই এখানে পাঁচ-ছয় বস্তা রাই ঝাড়া হয়ে গিয়েছে। আসলে বেলা অনেক বেড়েছে। সূর্য এখন প্রায় মাথার উপরে। সবাই চাইছে যত শীঘ্র সম্ভব কাজ গুটিয়ে এনে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে। সকাল থেকে অনেক পরিশ্রম হয়েছে। সকলেই বেশ পরিশ্রান্ত। তবে পরিশ্রম যতই হোক, এই মানুষগুলোর মনে আনন্দ সবসময় লেগেই থাকে। তিন মাস ধরে টানা পরিশ্রমের পর যখন ঘরে ফসল ওঠে, তখন তো একটু আনন্দ হবেই।

... আগেই বলেছিলাম, সরষের চাষ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, মাঠ এখন প্রায় ফাঁকা। কেবল কিছু কিছু মাঠে ধনে রয়েছে। সরষে হল আমাদের অঞ্চলের শীতকালীন ফসল বা রবি শস্য। গঙ্গা পার্শ্ববর্তী এই অঞ্চলের মাটি প্রধানত পলি মিশ্রিত দোআঁশ মাটি, যা ধান চাষে যেমন উপযুক্ত, ঠিক একই রকম ভাবে এই অঞ্চলে রবি শস্যর চাষও প্রচুর পরিমানে হয়ে থাকে। এখানকার কৃষি অর্থনীতিতে দানা শস্য ধানের পরেই হল সরষে বা রাই'এর স্থান। আমাদের এই অঞ্চলে মোটামুটি তিন প্রকারের সরষের চাষ হয়। এগুলো হল টোরি সর্ষে, রাই সর্ষে আর শ্বেত সর্ষে। প্রধানত বাংলা ক্যালেন্ডারের আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে সরষের বীজ বোনা হয়। ধান চাষের তুলনায় এই চাষের খরচ অবশ্য একটু কম। ধান চাষের মতো এই চাষে অতো সার বা জলের ও প্রয়োজন পরে না। ধানের মতো লাইন করে না বুনে, সরষে বীজ আমাদের এখানে প্রধানত ছিটিয়ে বোনা হয়। তার আগে জমিতে লাঙ্গল বা ট্র্যাক্টর দিয়ে ভালো ভাবে চাষ করে, মই দিয়ে জমি সমান করে এমন ভাবে পরিপাটি করে নিতে হয় যাতে জমিতে খুব বেশি জল বা রস না থাকে। মাটি যেন একটু ঝুরঝুরে হয়। এই ব্যাপারটিকে স্থানীয় ভাষায় সকলে বলেন "জমিতে জো হওয়া"। মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে বা 'জো' ঠিক মতো হলে, বীজ থেকে চারা বের হতে সময় লাগে দুই-তিন দিন। আর ফসল পাকতে সময় লাগে মোটামুটি তিন মাস। সর্ষে চাষে সার প্রয়োগ করতে হয় মাত্র দুবার। একবার বীজ বোনার আগে জমি তৈরির সময় আর একবার চারা বের হওয়ার ৩০-৩৫ দিনের মাথায়। সর্ষে চাষে জমিতে জলসেচ'ও দুইবার যথেষ্ট। বীজ থেকে চারা বের হওয়ার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে, গাছে ফুল আসার আগে প্রথম সেচ। আর ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে গাছে মোচা আসার আগে দ্বিতীয় সেচ। তবে সেচের সময় খেয়াল রাখতে হয়, যাতে জমিতে জল না দাঁড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে চাষের ক্ষতি হয়ে যায়। সর্ষে চাষে ক্ষতির আরও একটি বড় কারন হল 'জাব পোকা'। এই পোকার আক্রমণে সরষের পাতা কুঁকড়ে যায় এবং ফুল বা ফলের বৃদ্ধিও ঠিক মতো হয় না। ফলে রাই'এর দানা আকারে ছোট হয়, এবং বীজে তেলের পরিমানও কমে যায়।

... রাই এবং টোরি সরষে'কে অনেকে কালো সরষে ও বলে। সম্পূর্ণ পেকে গেলে রাই সরষের দানার রঙ হয় কালচে খয়েরি আর টোরি সরষের দানার রঙ হয় লালচে কালো। সেইজন্যই এই দুটো সরষে কালো সরষে নামে পরিচিত। এর মধ্যে রাই সরষের দানা একটু বড় আর টোরি সরষের দানা একটু সাইজে ছোট হয়। রাই সরষের তুলনায় টোরি সরষে থেকে তেল'ও একটু বেশি উৎপাদন হয়। আবার অনেকে বলেন টোরি সরষে চাষে রোগ প্রতিকারের খরচ ও তুলনামূলক ভাবে কম। সেই কারণে আজকাল টোরি সরষের চাষ বেশি হচ্ছে। তবে এব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতে, টোরি সর্ষের ক্ষেত্রে তেল উৎপাদন একটু বেশি হলেও গুনগত মানে রাই সর্ষের তেল বেশি ভাল। টোরি সর্ষে থেকে যে তেল উৎপাদন হয়, সেই তেল স্বাদে একটু তিতকে বা তেঁতো। তেলের রঙও একটু হালকা, অনেকটা রেপসিড তেলের মতো। সেই তুলনায়, রাই সর্ষের তেলের স্বাদ এইটু টক। এছাড়াও রাই সর্ষের তেলে ঝাঁঝালো গন্ধ একটু বেশি। সেকারনেই বিভিন্ন সস, কাসুন্দি বা আচার তৈরি করতে রাই সর্ষের তেল বেশি ব্যবহার করা হয়। শ্বেত সরষে'র পাকা বীজের রঙ হল হালকা হলুদ। একারণেই এই সরষে কে শ্বেত সরষে বা হলুদ সর্ষে অথবা কোনও কোনও অঞ্চলে ধলা সরষেও বলে। শ্বেত সরষের দানা প্রধানত মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গাছ যখন ছোট থাকে, তখন সরষের পাতা "সরষে শাক" হিসাবে খাওয়াও হয়। আবার সরষের দানা পিসে তেল বের করে নেওয়ার পর অবশিষ্ট যা পরে থাকে তাকে আমরা বলি "খৈল" বা "খোল"। জমির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য খোল,জৈব সার হিসাবে গোবর সারের সাথে মিশিয়ে জমিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যেহেতু এই খোলে প্রায় ৪০ শতাংশ প্রোটিন থাকে এবং খাদ্য হিসাবে গরু ও মহিষের এই খোল খুব প্রিয়, সেকারণে আমাদের এখানে বেশিরভাগ খোল গোখাদ্য হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।

... সর্ষে সম্বন্ধে এই যে এত তথ্য আপনাদের জানালাম, তা সম্পূর্ণ, এই অঞ্চলের অভিজ্ঞ চাষিদের কাছ থেকে শোনা। তা না হলে, আমার মতো শহুরে মানুষের পক্ষে এত তথ্য জানা সম্ভব নয়। যাই হোক, এবার কাজের কথায় ফিরি। এতক্ষণ কাজ বেশ ভালো গতিতেই চলছিল। হারাই দাদা'রাও আরও একবার বাড়িতে বস্তা পৌঁছে দিয়ে ফিরে এসেছে। এদিকে এখানকার কাজও প্রায় হয়ে এলো। মেশিনের গতিও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

... আজকের মতো মাঠের কাজ শেষ হল। হুলার মেশিন টেনে নিয়ে ট্র্যাক্টর ফিরে চলেছে। যে কয়েক বস্তা সরষে রয়েছে, রফিক ভাই'রা মাথায় করে বাড়ি বয়ে দিয়ে এলেই এবারের মতো সরষে ঝাড়া শেষ। কেবল অল্প যেটুকু রাই পরে রয়েছে, তা চালুনিতে ভালো করে চেলে নিলেই হবে।

... বেলা অনেক হয়েছে। এবার বাড়ি ফিরতে হবে। ওম'ও বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। ওর খুব ইচ্ছা ছিল, ট্র্যাক্টরে চড়ে বাড়ি ফিরবে। আমারও একটু একটু ইচ্ছা হচ্ছিল, কিন্তু সেটা আজ আর সম্ভব হয়নি। যদি কোনোদিন সম্ভব হয়, আপনাদেরও চড়াবো। যাই হোক, আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হচ্ছে আবার পরের পর্বে ততদিন সকলে ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আর যদি এই পর্বটি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই Like করবেন এবং আমার Channel টি অবশ্যই Subscribe করবেন। বাই ... ...

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০১৪ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 014]
২৮শে অগ্রহায়ণ,  ১৪২৯; (15th December, 2022), বৃহস্পতিবার।


... সুপ্রভাত বন্ধুরা, কামদেবপুর গ্রামে মাঠে আপনাদের সবাইকে স্বাগত। আমি প্রবীর, দা লেজি ভ্লগার। শুরু করছি আরও একটা নতুন ভ্লগ। 

... আজও সকাল সকাল আমরা বেরিয়ে পরেছি, ডাঙা মাঠের উদ্দ্যেশে। আমরা বলতে, আমি আর সঙ্গে অবশ্যই ওম। আর ওম এর দাদুও চলেছেন আজ আমাদের সাথে।  গন্তব্য সেই কলের ধার। অবশ্য কেবল আমরা তিনজন নই, মাঠে আজকে অনেকেই উপস্থিত থাকবেন। রফিক ভাইরা যেমন অবশ্যই থাকবেন। তেমনই থাকবেন ছোটকাকা, হারাধন দাদারা। মনেহয় রাখু আর পীযূষও আজ মাঠে আসবে। আগের ভ্লগে আপনাদের রাই বা সর্ষের খামারে নিয়ে গিয়েছিলাম। আজ তেমনই আর একবার নতুন খামার তৈরি করতে সকলে মাঠে জড়ো হচ্ছেন। তবে এবারে মুসুরির খামার। 

... বৈদ্যনাথ কাকা, বাড়ি থেকে মাথায় করে সার বয়ে নিয়ে এসেছেন। সম্ভবত নতুন কলাবাগানে সার দেবেন। অনেকটা সার। পুরো একবস্তা। বাড়ি থেকে মাথায় করে এতটা রাস্তা নিয়ে আসা বেশ কষ্টকর। সেকারনেই তিনি ক্ষেত মজুর দের ডাকছেন। যাতে তারা সারের বস্তা ভালো ভাবে ধরে নামিয়ে নিতে পারে। 

... ছোটদাদুর কাঁঠাল তলার এই জায়গাটা বেশ সবুজ। বুড়োকাকারা এই জমিতে খুব সম্ভবত এটি গ্যামা লাগিয়েছেন। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। এই গ্যামা'র জন্যই জায়গাটা বেশ সবুজ লাগছে। গ্যামা এক ধরনের ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। প্রধানত সুষম গোখাদ্য হিসেবেই এটি ব্যবহার করা হয়। 

... চলুন তাড়াতাড়ি মাঠের দিকে যাওয়া যাক। ওম'রা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। আস্তে হাঁটলে পিছিয়ে যাব। আসলে মাঠের আলপথে ওরা যত তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারে, আমি তত তাড়াতাড়ি পারি না। হোঁচট খেয়ে উল্টে যাওয়ার বেশ সম্ভবনা থাকে। খুব সাবধানে চলতে হয়। সেই কারণে মাঝে মাঝে পিছিয়ে পরি। 

... এখানে মাঠের ধারে একটা গাছ কাটা হচ্ছে। যে ভদ্রলোক ঠিকা নিয়ে গাছ কাটছেন, ওম'রা তাঁর সাথেই দেখা করতে যাচ্ছিলো। আসলে ডাঙা মাঠে ওম'দের কলঘরের ধারে একটা বেশ বড় অশ্বত্থ গাছ রয়েছে। সেই গাছটা কাটার ব্যাপারেই কথা বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বেলা বেশ বেড়ে যাচ্ছে। ওদিকে মুনিশ-মজুর ভাইরা সকলে বসে রয়েছেন। রোদের তেজ বেড়ে গেলে কাজ করতে একটু অসুবিধা হবে। তাই এখন এব্যাপারে কথা না বলে ফিরে এলেন। 

... মুসুরির ফল পেকে যাওয়ার পর, গাছ এতদিন কেটে মাঠেই শুকনো হওয়ার জন্য ফেলে রাখা ছিল। আজ সেই সব মুসুরি জড়ো করতে হবে। জমিতে ভালো করে নাইলনের জাল পেতে তার উপরেই মুসুরি জড়ো করতে হয়। জাল পেতে না নিলে, thresher মেশিনে মাড়াই করার সময় বা হুলার করার সময় প্রচুর ফসল জমিতে ছড়িয়ে নষ্ট হয়। এই কাজের জন্য বড় বড় মশারি জাল কিনতেও পাওয়া যায়। আজ অবশ্য সকলে জমিতে জাল পেতে তার উপর সব মুসুরি জড়ো করে রাখবে। এভাবেই সব ফসল ভালো করে শুকনো হওয়ার পর জড়ো করে, হুলার মেশিন নিয়ে এসে মুসুরি ঝেড়ে নিতে হবে। আসলে thresher মেশিনে মুসুরি ঝাড়তে বেশ কম সময় লাগে। সেকারণে একই সঙ্গে খামার করে মাঠের সব মুসুরি যদি একদিনে মাড়াই করে ঝেড়ে নেওয়া যায়, তাহলে ট্র্যাক্টর মালিকের একটু সুবিধা হয়। 

... সর্ষে কাটার পরে মাঠ এখনো ফাঁকা। আসলে একটা ফসল হয়ে যাওয়ার পর, ট্র্যাক্টর দিয়ে ভালো করে চাষ দিয়ে জমি কিছুদিন ফাঁকা রেখে দিতে হয়। এরফলে নাকি ফলন একটু ভালো হয়। এখন মাঠে সেই চাষ দেওয়ার কাজ চলছে। ট্র্যাক্টর এখন খুব ব্যস্ত। মাঠে এলেই কেবল ট্র্যাক্টর এর আওয়াজ। 

... যাই হোক, অবশেষে মুসুরি ক্ষেতের ধারে পৌঁছানো গেল। চলুন এবার কাজ শুরু করা যাক। আজ আকাশে বেশ মেঘ টানছে। বেলা অনেক হলেও রোদের তেজ খুব একটা বাড়েনি। আবহাওয়া এখনো বেশ ঠাণ্ডা। কাজ করতে তেমন কোনও অসুবিধা হবে না।

... এখানে কাজ চলতে থাকুক, সকলে মুসুরি জড়ো করুক। চলুন আমরা একটু ঘুরে আসি। একটু দূরে ধনে লাগানো আছে। আবার কিছুটা জমিতে গমও লাগানো হয়েছে। চলুন দেখে আসি কেমন ফলন হল। ওম আবার অনেকক্ষণ ধরে বায়না ধরেছে, শসা ক্ষেতে যাবে । এজন্য ও বারবার ওর দাদুকে বিরক্ত করছে।

... গমের ফলন এবার সত্যিই খুব ভালো হয়েছে। মাঠে এরকম ফসল দেখলে খুব আনন্দ হয়। মন খুব ভাল হয়ে যায়। যদিও গাছ এখনো সবুজ। ফসল এখনো পাকেনি। এখনো প্রায় দশ দিন মতো সময় লাগবে। ভালো মতো পেকে গেলে এই গমের রঙ সোনালি হয়ে যায়। তখন আরও দেখতে ভাল লাগে।

... অবশ্য এবার গম কম লাগানো হয়েছে। যেটুকু গম লাগানো আছে, তা বাড়িতে নিজেদের খেতেই ফুরিয়ে যাবে। যাই হোক চলুন খামারের দিকে ফেরা যাক। এতক্ষণে মনে হয়, মুসুরি জড়ো করা হয়ে গিয়েছে। এবার হুলার মেশিনের জন্য অপেক্ষা।

... পীযূষ ও মাঠে চলে এসেছে। ওদেরও আজ মুসুরি জড়ো করার কাজ চলছে। এদিকে ভিডিওটা বেশ বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবছি এই পর্ব এখানেই শেষ করবো। পরের পর্বে পীযূষ'দের নতুন খামার কেমন হল, আপনাদের দেখাবো। আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হচ্ছে আবার পরের পর্বে। ততদিন সকলে ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আর যদি এই পর্বটি আপনাদের ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই ভিডিওটি লাইক করবেন। এবং আমার চ্যানেলটি অবশ্যই subscribe করবেন। বাই। 

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


কামদেবপুরের কথা : পর্ব ০১৫ [The Tales of Kamdevpur : Vlog 015]
১০ই পৌষ, ১৪২৯; (26th December, 2022), সোমবার।


... সুপ্রভাত বন্ধুরা। ডাঙা মাঠের নতুন মুসুরি খামারে আপনাদের সকলকে স্বাগত। আমি প্রবীর। দা লেজি ভ্লগার। শুরু করছি, আরও একটা নতুন ভ্লগ। যারা আমার আগের ভ্লগ টা দেখেছেন তারা সকলেই জানেন, তবুও আপনাদের আরও একবার জানিয়ে রাখি, আমি এই মুহূর্তে রয়েছি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কালীগঞ্জ থানার অন্তর্গত কামদেবপুর গ্রাম পার্শ্ববর্তী ডাঙা মাঠে। সেখানে আজ মুসুরি জড়ো করার কাজ চলছে। ফল পেকে যাওয়ার পর, কয়েকদিন আগে মুসুরি জমি থেকে তুলে মাঠেই শুকনো করার জন্য ফেলে রাখা ছিল। আজ মাঠে জাল পেতে তার উপর সেই শুকনো মুসুরি জড়ো করে রাখা হচ্ছে, যাতে আগামী কাল ট্র্যাক্টর সহ thresher মেশিন নিয়ে এসে মাড়াই করার সময় একটু সুবিধা হয়। 

... ওম দের মুসুরিও আজ জড়ো করার কাজ চলছে। আগের ভ্লগে সেই খামারের ছবি আপনাদের দেখিয়েছি। এতক্ষণ আমরা সেখানেই ছিলাম। এখন চলেছি পীযূষ এর কাছে। হারাধন দাদা'র ছেলে পীযূষ। ওদের মুসুরিও আজ জড়ো করছে। ও নিজেই মাঠে উপস্থিত রয়েছে। আবার ওদের পাশেই ছোটকাকা খামার করেছে। সেখানে রফিক ভাই'ও থাকবে। চলুন সেখানে যাওয়া যাক। 

... এটা রাখুদের খামার। রফিক ভাইয়ের সাথে ছোটকাকা নিজেই আজ মুসুরি জড়ো করছেন। মুসুরি পেকে যাওয়ার পর ফসল শুকনো হওয়ার জন্য মাঠে কয়েকদিন ফেলে রাখা ছিল। সেই ফসল এমন ভাবে জড়ো করা হচ্ছিল যে, আমার কেবল মনে হচ্ছিল সব শুকনো ফল ঝোড়ে গিয়ে মাঠেই ছড়িয়ে যাবে। সেই ব্যাপারেই আমি রফিক ভাইকে জানতে চাইছিলাম। কিন্তু রফিক ভাই বললে মুসুরি বা ধনের ফল খুব শক্ত হয়। গাছের পাতা ঝোড়ে গেলেও ফল খুব সহজে ঝোড়ে যায় না। সেকারনে মুসুরি জড়ো করার সময় খুব একটা সতর্কতা অবলম্বন করার দরকার পরে না।

... যাইহোক, রফিক ভাইরা এখানে মুসুরি জড়ো করুক। ওদিকে আবার "অদি" তার বাবার সাথে মাঠে ঘুরতে চলে এসেছে। চলুন ওর সাথে আলাপ করে আসি। 

... বেলা এখন বেশ বেড়েছে। আজ আবার আকাশে মেঘ টানছে। তাই রোদের তেজ একটু কম। সময় যে এতটা বেড়েছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। সেই ভোরবেলা মাঠে এসেছিলাম। সঙ্গে ওম। অবশ্য ওম এতক্ষণে বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে। এদিকে আমাদেরও খুব খিদে পেয়েছে। এখনো সকালের জলখাবার খাওয়া হয় নি। অদি ওর বাবার সাথে বাড়ি ফিরে চলেছে। চলুন ওদের সাথে ফেরা যাক। বাড়ি ফিরে হাত পা ধুয়ে আগে কিছু খেয়ে নিতে হবে। 

... সর্ষে কাটার পরে মাঠ এখন ফাঁকা। আসলে একটা ফসল হয়ে যাওয়ার পর, ট্র্যাক্টর দিয়ে ভালো করে চাষ দিয়ে জমি কিছুদিন ফাঁকা রেখে দিতে হয়। এতে নাকি ফলন খুব ভালো হয়। মাঠে এখন সেই চাষ দেওয়ার কাজ চলছে। ট্র্যাক্টর এখন খুব ব্যস্ত। মাঠে এলেই কেবল ট্র্যাক্টর এর আওয়াজ। 

... জমিতে সবে চাষ দেওয়া হয়েছে। মাঠ এখন শুকনো। ছোট বড় মাটির ঢেলায় ভর্তি। ভাল ভাবে দেখে পা না ফেললে যেকোনও মুহূর্তে মোচকে যাওয়ার সম্ভবনা। তার সাথে আবার মাঠ ভর্তি সর্ষে গাছের শক্ত গোড়া। পায়ে লাগলে কেটে যাচ্ছে। সেইজন্য আমার হাঁটতে একটু অসুবিধা হচ্ছিল। সেকারনেই রাখু ট্র্যাক্টরের চাকার নিক ধরে হাঁটা শুরু করলো। এইসময় ট্র্যাক্টর গুলো যে পথে মাঠে নামে, সেখানে ট্র্যাক্টরের চাকায় সাময়িক সময়ের জন্য একটা পথ তৈরি হয়। চাকার চাপে তৈরি হওয়া সাময়িক এই পথকে স্থানীয় ভাষায় বলে "নিক"। যাতে চলতে সুবিধা হয়, সেকারন আমরা সেই নিক ধরেই হাঁটা শুরু করলাম। 

... ছোট দাদুর কাঁঠালতলা, আম বাগান, বাঁশ বাগান পার হয়ে, অবশেষে বাড়ি পৌঁছনো গেল। প্রচণ্ড জল পিপাসা পেয়েছে। আগে একটু জল খেতে হবে। তারপর অন্য কাজ। যাইহোক এই পর্ব এখানেই শেষ করছি। আগামী পর্বে আবার দেখা হবে। ততদিন সকলে ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আর যদি এই পর্বটি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই Like করবেন এবং আমার Channel টি  অবশ্যই Subscribe করবেন। বাই ... ...

© Prabir Kumar Das ( The Lazy Vlogger )
֍ আমার ইউটিউব চ্যানেল ঃ youtube.com/@thelazyvlogger72

Back to top ...            Home ...


|| Page 01 |Page 02 |Page 03 || Page 04 || Page 05 || Page 06 || Page 07 ||